‘আন্দোলন-সংগ্রামে পরাজিতরা ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রামে যারা নেত্রীকে পরাজিত করতে পারেনি, তারা আজকে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। ষড়যন্ত্রের চোরাইপথে তারা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে চায়।’

বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিনের (বীরবিক্রম) স্মরণে আয়োজিত নাগরিক শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। উপজেলার চুনতী মেহেরুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ষড়যন্ত্র হচ্ছে, চ্যালেঞ্জের মুখে এগিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এ দুঃসময়ে, সংকটে এবং চ্যালেঞ্জের মুহূর্তে শেখ হাসিনার পাশে একজন বিশ্বস্ত সাহসী মানুষ হিসেবে জেনারেল আবেদিনের খুব প্রয়োজন ছিল।’

জেনারেল জয়নুল আবেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থার প্রতীক ছিলেন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেত্রীর একটা কথা মনে পড়ে। তিনি বলেছিলেন, আমাকে যদি কখনো না পাও, টেলিফোনেও যদি না পাও। আবেদিনের কাছে মেসেজ রেখে যেও। সময়মতো আমাকে জানাবে। কোনো খবর নেত্রীকে দিতে হলে, নেত্রীকে না পেলে আবেদিনের কাছে যেতাম। সেই আবেদিন আজ আর নেই। তাকে আমি সব সংকটে নেত্রীর আশপাশে দেখেছি। ক্রাইসিসে আবেদিন ছুটে আসতেন।’

জেনারেল আবেদিন গণভবনের সঙ্গে জনগণের সেতুবন্ধ রচনা করেছিলেন উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, জনগণের সঙ্গে গণভবনের সেতুবন্ধ রচনা করেছিলেন জেনারেল আবেদিন। অহংকার কখনো দেখিনি। সৈনিক হয়েও তার গণ্ডি পেরিয়ে জনগণের সঙ্গে অবাধে মিশে যেতে পারতেন।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ দরকার। সেই সোনার মানুষের বড় অভাব রাজনৈতিক অঙ্গনে। আমি কাছ থেকে দেখেছিলাম, তার যে জীবন, তার যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, তার যে প্রজ্ঞা, তার যে কমিটমেন্ট। একজন জনপ্রতিনিধির চাইতেও জনগণের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল আরও গভীর এবং নিবিড়। এ গ্রামে এলে বোঝা যায়, একজন মানুষ শেকড়ের টানে, তার জন্মভূমির জন্য কী দিতে পারেন। এ অন্ধকার গ্রামকে আলোকিত করেছেন জেনারেল আবেদিন। এ অন্ধকার গ্রামে বিদ্যুতের আলো, শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন জেনারেল আবেদিন।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে, জেনারেল আবেদিনের আহ্বানে এ চুনতি গ্রামে আমি এসেছিলাম। এই যে রাস্তা জেনারেল আবেদিনের উদ্যোগে হয়েছিল। তার শুভ উদ্বোধন আমি করেছিলাম। রাস্তা ছিল না, রাস্তা তিনি করেছেন। বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরে যে সাধারণ মানুষ, তাদের জন্য তিনি হাসপাতালের ব্যবস্থা করেছেন। এখানেই মাঠ সভা হয়েছিল। আপনারা সবাই সেদিনও ছিলেন, আজও আছেন। আমাকে তার কবর জিয়ারত করে এই সভায় বক্তৃতা করতে হবে তা মেনে নিতে পারছি না।’

জেনারেল জয়নুল আবেদিন চট্টগ্রামের মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জেনারেল আবেদিনকে আমি শ্রদ্ধা করি। আমি তাকে স্যালুট করি। তিনি চলে গেছেন, কিন্তু যে কীর্তি তিনি রেখে গেছেন তা অসাধারণ। মানুষের প্রতি ভালোবাসার যে বিরল দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করে গেছেন তা আর কারও নেই। চুনতিবাসী আপনারা তাকে হারিয়ে অনেক কিছু হারিয়েছেন। শেকড়ের টানে যে মানুষটি বারবার এ গ্রামে ছুটে আসতেন। সে মানুষটি আর কোনো দিন আপনাদের মাঝে ফিরে আসবেন না। দেশ মাতৃকার এ বীর সন্তান আপনাদের আপন মানুষ আপনাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।’

প্রয়াত সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিনের বড় ভাই ইসমাইল মানিকের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত দফতর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমদ, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ সাইমুম সরওয়ার কমল প্রমুখ।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.