রিভিউয়ে হাব নেতাদের এজেন্সির শাস্তি বহাল কমল ১৯টির

downloadপবিত্র ওমরাহ পালনের নামে মানবপাচারের অভিযোগে লাইসেন্স বাতিলসহ শাস্তিপ্রাপ্ত ৯৪ ওমরাহ এজেন্সির রিভিউয়ের পুনর্বিবেচনার রায় প্রকাশ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এতে ১৯টি এজেন্সির শাস্তি কমানো হয়েছে এবং একটি এজেন্সিকে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) নেতাদের মালিকানাধীন এজেন্সিগুলোর শাস্তি বহাল রয়েছে।

গত বছরের নভেম্বর মাসে মোট ৯৪টি ওমরাহ এজেন্সিকে লাইসেন্স বাতিল ও জরিমানার শাস্তি দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর চার মাস পর বুধবার রাতে রিভিউয়ের রায় প্রকাশ হলো।

এ প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয় যেসব এজেন্সিকে শাস্তি দিয়েছিল, তারা সবাই শাস্তি পুনর্বিবেচনা করতে রিভিউ আবেদন করেছিল। মন্ত্রণালয় পুনঃবিচার বিশ্লেষণ করে ১৯ এজেন্সির শাস্তি কমিয়েছে। এর মধ্যে হাব নেতাদের এজেন্সিগুলো নেই।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওমরাহর নামে মানবপাচারের অভিযোগে গত বছর পুরো সময় বাংলাদেশি ওমরাহ পালনকারীদের ভিসা বন্ধ রেখেছিল সৌদি আরব। একই সঙ্গে যেসব এজেন্সি মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের একটি তালিকাও বাংলাদেশ সরকারকে পাঠিয়েছিল সৌদি সরকার। সেই তালিকা ধরে তদন্ত করে ৯৪ এজেন্সিকে শাস্তি দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। এরপর দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে দীর্ঘ আলোচনা ও দায়ী এজেন্সিগুলোকে শাস্তি দেওয়ার পর আবারও বাংলাদেশিদের ওমরাহ পালনের ভিসা দেওয়া শুরু হয়।

সূত্র জানায়, যেসব এজেন্সি নির্দোষ, সে রকম ১৫৯টি এজেন্সিকে গত ডিসেম্বর থেকে ওমরাহ পালনের লোক পাঠানোর অনুমতি দেয় সরকার। এর মধ্যে গত ২১ ডিসেম্বর ৭০টি, ২৮ জানুয়ারি ৪৭টি এবং ১৫ মার্চ ৪২টি এজেন্সিকে অনুমতি দেওয়া হয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. শহীদুল্লাহ তালুকদারের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রিভিউয়ে শাস্তিপ্রাপ্ত এজেন্সিগুলোর মধ্যে ১৯টির শাস্তি কমিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। অরবিটালস ট্রাভেল এজেন্সিকে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শাস্তিপ্রাপ্ত বাকিদের শাস্তি বহাল রয়েছে।
শাস্তি কমেছে যে ১৯টি এজেন্সির সেগুলো হলো এয়ার ট্রিপ ইন্টারন্যাশনাল, আল মানসুর এয়ার সার্ভিস, চ্যালেঞ্জার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, কক্সবাজার ওভারসিজ, ডাইনেস্টি ট্রাভেলস লি., লাব্বাইক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, ইমা ওভারসিজ ট্যুরস, ভার্সেটাইল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, মক্কা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, বলাকা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, কম্বাইন্ড ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, নাহার ইন্টারন্যাশনাল, ইহসান এয়ার ট্রাভেলস, আলফা ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, মৌরী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সাইমন ওভারসিজ এক্সপ্রেস, লিনটাস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, হাসনাইন ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস ও ইনামন এভিয়েশন লিমিটেড। এসব এজেন্সিকে ৫০ হাজার টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে। তবে তারা ওমরাহ কার্যক্রম চালাতে পারবে।
এদিকে বর্তমানে হজের নেতৃত্বদানকারী হাব নেতাদের ওমরাহ এজেন্সি বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্ত ও বিভিন্ন ধরনের জরিমানা বহাল রয়েছে। ফলে তাঁরা হজের কাজ করতে পারলেও ওমরাহর কাজ করতে পারবেন না। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন হাব সভাপতি ইব্রাহীম বাহারের মেগাটপ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল (প্রা.) লিমিটেড, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হেলাল উদ্দিনের মুনা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড, ভাইস প্রেসিডেন্ট ফরিদ আহমেদ মজুমদারের গোল্ডেন বেঙ্গল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, মহাসচিব শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সনজরী ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, যুগ্ম সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন কামালের হাশেম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান ইসি মেম্বার আফতাব উদ্দীন চৌধুরীর মালিকাধীন আফতাব ট্রাভেলস অ্যন্ড ট্যুরস ও আটাব চট্টগ্রাম জোনের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের মালিকানাধীন গালফ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস।
জানতে চাইলে হাব সভাপতি মো. ইব্রাহীম বাহার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা এখনো বলতে পারছি না। আমরা তো শাস্তির বিরুদ্ধে রিভিউ করেছিলাম। এখন দেখছি মাত্র ১৯টির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আগামীতে যদি আর কোনো তালিকা প্রকাশ করা না হয় তবে তা দেখে আমরা পরবর্তী উদ্যোগ নেব।’
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছরের ১৮ নভেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান শাস্তিপ্রাপ্ত ওই ৯৪টি এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করেন। সেদিন তিনি জানান, ১০৪টি ওমরাহ এজেন্সির পাঠানো যাত্রীদের মধ্যে ১১ হাজার ৪৮৫ জন ফেরত আসেনি। এসব এজেন্সির অভিযোগ তদন্ত করে ৯৪টিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আর ৯টি এজেন্সির অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.