অত্যাধুনিক বহর নিয়ে নতুন ১২ গন্তব্যে ছুটবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

অত্যাধুনিক বহর নিয়ে নতুন ১২ গন্তব্যে ছুটবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

সুপরিসর বহর নিয়ে নতুন গন্তব্যে পাখা মেলছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। উড়োজাহাজ সংকট ও লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া কিছু গন্তব্য ছাড়াও চালু হচ্ছে ১২টি নতুন রুট। অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ নিয়ে এসব রুটে প্রতিযোগী অন্যান্য এয়ারলাইনস থেকে এগিয়ে থাকতে চায় সংস্থাটি। দীর্ঘ যাত্রাপথে কোনো ধরনের বিরতি ছাড়াই সরাসরি ফ্লাইটে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিমানের প্রতি আকৃষ্ট হবেন বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে বিমানের আন্তর্জাতিক ১৫টি রুটের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েত, দাম্মাম, দোহা, মদিনা, রিয়াদ, জেদ্দা, আবুধাবি, দুবাই ও  মাস্কাটে ফ্লাইট রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুর এবং স্বল্প দূরত্বে কলকাতা ও কাঠমাণ্ডুতে ফ্লাইট চালাচ্ছে বিমান। এর বাইরে ইউরোপে কেবল লন্ডন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান।

উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা লাভজনক হওয়ার সুযোগ কম। এ অবস্থায় দূর গন্তব্যে নতুন নতুন ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়েছে বিমান। তবে এ ক্ষেত্রে বাজার জরিপের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, করপোরেট যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে না পারলে দূরপাল্লার ফ্লাইট পরিচালনা করে ভালো ফল পাওয়া যাবে না।

সূত্র জানায়, এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকাসহ একসময় ২৮টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করত বিমান। কিন্তু উড়োজাহাজ সংকটসহ অব্যাহত লোকসানে বেশ কিছু গন্তব্যে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। বিমানবহরে যুক্ত হওয়া নতুন ছয়টি ড্রিমলাইনার দিয়ে অন্তত ১২টি নতুন রুটে উড়াল দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। আগামী ৫ জানুয়ারি চালু হবে লন্ডনের ম্যানচেস্টার ফ্লাইট। লন্ডনের হিথ্রো ও ম্যানচেস্টারে সপ্তাহে সাত দিনই চলাচল করবে সদ্য যুক্ত হওয়া ২৯৮ আসনের দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ‘সোনার তরী’ ও ‘অচিন পাখি’। অত্যাধুনিক এ দুটি বিমান আগামী শনিবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লন্ডন রুটে যেসব উড়োজাহাজ চলছিল তা মধ্যপ্রাচ্যে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২৪৭ আসনের বাকি চারটি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার আবুধাবি, সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে লন্ডন ও ম্যানচেস্টারে যাবে।

এ ছাড়া চীনের গুয়াংজু, ভারতের চেন্নাই, মালদ্বীপের মালে, শ্রীলঙ্কার কলম্বো, কানাডার টরন্টো, জাপানের টোকিও, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, ইতালির রোম রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা আছে বিমান কর্তৃপক্ষের। আর যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন বিভাগের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ‘ক্যাটাগরি-১’ পাওয়া সাপেক্ষে চালু হবে নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট। বাড়ানো হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইট। একই সঙ্গে ম্যানচেস্টার হয়ে টরন্টো ফ্লাইট চালুর চেষ্টা চলছে। তবে এসব রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আরো উড়োজাহাজ দরকার হবে বিমানের।

এদিকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বন্ধ থাকা চীন-জাপান-থাইল্যান্ড রুটে ড্রিমলাইনার দিয়ে ফ্লাইট চালু হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে পূর্বমুখী ফ্লাইট বন্ধ থাকা নিয়ে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ ছিল। নতুন বছরে ভারতের চেন্নাই ও চীনের গুয়াংজুর পাশাপাশি ব্যাংকক হয়ে জাপানে যাবে বিমান। বেসরকারি রিজেন্ট এয়ারওয়েজ চট্টগ্রাম-ব্যাংকক রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু করে। বর্তমানে তা স্থগিত করা হয়েছে। ফলে ব্যবসায়ী, পর্যটক ও চিকিৎসাসেবাপ্রত্যাশীরা সরাসরি থাইল্যান্ডে যেতে না পেরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে সম্প্রতি দেওয়া এক চিঠিতে ভোগান্তির বিষয়টি উল্লেখ করেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বলেন, ‘বিমানবহরে রয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সব উড়োজাহাজ। ঢাকা-ম্যানচেস্টার সরাসরি ফ্লাইট চালুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৫ জানুয়ারি এটি চালু করছে বিমান।’

বিমান সূত্র জানায়, বিমানের বহরে বর্তমানে উড়োজাহাজ রয়েছে ১৬টি। এর মধ্যে নিজস্ব ১০টি। বাকি ছয়টি লিজে আনা। নতুন দুটি ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার ‘সোনার তরী’ ও ‘অচিন পাখি’সহ বিমানের উড়োজাহাজ হবে ১৮টি। এ ছাড়া কানাডা থেকে কেনা তিনটি ড্যাশ-৮ দেশে আসছে আগামী বছর। সেগুলো দিয়ে অভ্যন্তরীণ সব রুটে ফ্লাইট বাড়াতে চায় বিমান।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোকাব্বির হোসেন গতকাল বুধবার বলেন, ‘আমরা নতুন ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯ দিয়ে আগামী ৫ জানুয়ারি লন্ডন ও ম্যানচেস্টারে ফ্লাইট চালু করব। সৌদি আরবেও ফ্লাইট চালাব।’

নতুন উড়োজাহাজের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়ে বিমানের সাবেক বোর্ড সদস্য ও দ্য বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘আগে মার্কেট সার্ভে ও রুট নির্ধারণ করে তারপর এয়ারক্রাফট আনা হয়। কিন্তু বিমানের এয়ারক্রাফট এনে তারপর রুট ঠিক করা হচ্ছে। এটা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার শামিল।’

তিনি বলেন, ‘অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনার দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করলে প্রত্যাশিত ফল আসবে না। এগুলো বেশি দূরত্বে চলা এয়ারক্রাফট। এ ধরনের অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফটে বিজনেস ক্লাস হচ্ছে প্রিমিয়াম প্রডাক্ট। মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইটে সেই যাত্রী পাওয়া যাবে না। যেসব গন্তব্যে করপোরেট, ব্যাবসায়িক, পর্যটনের উদ্দেশ্যে মানুষ ভ্রমণ করে সেসব জায়গায় এগুলো চালানো উচিত। এ জন্য ইউরোপীয় গন্তব্যগুলোতে মার্কেট প্রমোশন করে চালালে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে। অন্যথায় এসব দামি উড়োজাহাজে ব্যাকফায়ারের আশঙ্কা আছে।’

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.