প্রতিদিন কার্গো বিমানে আসবে ১১০ মে.টন পেঁয়াজ

প্রতিদিন কার্গো বিমানে আসবে ১১০ মে.টন পেঁয়াজ।

এস আলম গ্রুপের মাধ্যমে আমদানি করা সব পেঁয়াজ সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রতিদিন বিমানে আসবে ১১০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। দ্রুত সঙ্কট মেটাতে প্রথম পর্যায়ে ১ হাজার ৭৫০ মে.টন পেঁয়াজ আসবে বিমানে। এছাড়া সমুদ্র পথে আরও ৬০ হাজার মে.টন পেঁয়াজ আসছে। স্বল্পদামে ভোক্তাদের হাতে পৌঁছে দিতে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হবে টিসিবির মাধ্যমে। এছাড়া রাজধানী ঢাকায় টিসিবির বিক্রি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে ৫০টি ট্রাকে করে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ভোক্তারা লাইন ধরে মসলা জাতীয় এই পণ্যটি স্বল্পদামে কিনতে পারছেন।

জানা গেছে, সরকারী বিভিন্ন পদক্ষেপে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। বাজারে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ১৫০-১৬০ এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া বাজারে নতুন ‘পাতা পেঁঁয়াজ’ পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে উঠতে শুরু করেছে নতুন পেঁয়াজ। এসব কারণে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মসলা জাতীয় এই পণ্যটির বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, দাম স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিমানে করে পেঁয়াজ এনে বাজারে সরবরাহ করা হবে। সরকার ভর্তুকি দিয়ে মসলা জাতীয় এই পণ্য ভোক্তাদের কাছে স্বল্পদামে বিক্রি করবে।

এদিকে, বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানিতে ইতোমধ্যে ১০টি কার্গো উড়োজাহাজ বুকিং নিশ্চিত করা হয়েছে। যার প্রতিটিতে ১০৫ থেকে ১১০ মে. টন পেঁয়াজ আনা হবে। যতদিন সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে ততদিন পেঁয়াজ আমদানি হবে। এছাড়া মিসর ও তুরস্ক থেকে সাগর পথে পেঁয়াজ আনা অব্যাহত রাখা হবে। যদিও ইতোমধ্যে বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠা শুরু হয়ে গেছে। পাতা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে রাজধানীর প্রতিটি বাজারে। এসব পেঁয়াজ মানভেদে ৬০-১২০ টাকায় কিনতে পারছেন ভোক্তারা। দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে গেলে এমনিই বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে সারাবছর ভোক্তাদের ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ দেয়ার বিষয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন বলেন, যতদিন বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হচ্ছে ততদিনই আমদানি করা হবে। বিমানে করে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ের আমদানি কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ের আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে আশা করছি, দেশী নতুন পেঁয়াজে দাম কমে আসবে। তিনি বলেন, কৃষকের ন্যায্যমূল্যের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে। কৃষকরা ভাল দাম পেলেই পেঁয়াজ চাষাবাদে উৎসাহী হবেন। সচিব বলেন, পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে একটি সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। কৃষি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বেশকিছু কর্মসূচী নিয়েছি বলে জেনেছি।

পেঁয়াজে ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার

এস আলম গ্রুপের আমদানি করা পেঁয়াজ ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিমানে আমদানিকৃত পেঁয়াজে ভর্তুকি না দিলে উচ্চমূল্য ধার্য করতে হবে। সরকার হিসাব করে দেখেছে এই পেঁয়াজে ভর্তুকি না দিলে তা সাধারণ ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে। এজন্য ভোক্তাদের সুবিধার্থে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে ৪৫ টাকায়। টিসিবির কার্যক্রম জোরদার হওয়ার কারণে বাজারে পেঁয়াজের উত্তাপ কমতে শুরু করেছে।

টিসিবির বিক্রি কার্যক্রম চলবে সারাদেশে

প্রথম পর্যায়ে ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে কটি বিভাগীয় শহরে টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তবে ভোক্তাদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এই কার্যক্রম শীঘ্রই সারাদেশে শুরু করতে যাচ্ছে টিসিবি। পুরোদমে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দেশে আসা শুরু হলে সেই পেঁয়াজ নিয়ে যাওয়া হবে জেলা শহরগুলোতে।

পাতা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে

শীতের পাতা পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে ঢাকার বাজারে। মূলত পাতা পেঁয়াজের ঝাঁজে দাম কমছে আসল পেঁয়াজের। ভোক্তারা বাজারে গিয়ে স্বাদের পাতা পেঁয়াজ কিনছেন কম দামে। মানভেদে প্রতিকেজি পাতা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-১২০ টাকা পর্যন্ত। পাতা পেঁয়াজের বড় সুবিধা সবজি হিসেবে খাওয়া যায় এই পেঁয়াজ। আবার নিচের অংশ পেঁয়াজ হিসেবে তরকারিতে ব্যবহার করা যায়। প্রতিদিনই বাজারে পাতা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে।

আকাশ পথে এস আলম গ্রুপের আমদানির চালান

আসা শুরু

মোয়াজ্জেমুল হক চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, অতি মাত্রার মূল্য হ্রাস পেলেও পেঁয়াজের বাজার এখনও অস্থিতিশীল। যেহেতু বর্তমানে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ থেকে সারাদেশে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সেক্ষেত্রে দেখা যায় বৃহস্পতিবার মিয়ানমার, মিসর ও চীন থেকে আমদানির সব ধরনের পেঁয়াজের মূল্য বুধবারের তুলনায় কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গেছে। পেঁয়াজের মূল্য কেজিপ্রতি আড়াই শ’ টাকা (কোথাও কোথাও আরও বেশি) পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার পর গত দু’সপ্তাহ ধরে মূল্য নি¤œমুখী হয়। কিন্তু এখন আবার উর্ধমুখী হওয়ার প্রবণতা দৃশ্যমান। এর মূল কারণ হিসেবে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের কমিশন এজেন্ট অর্থাৎ আড়ত মালিকরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজের পাইকার, কমিশন এজেন্ট, আমদানিকারকসহ সকল পর্যায়ে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। আর এ বৃদ্ধি না পাওয়ার জের হিসেবে পেঁয়াজের বাজারমূল্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের পক্ষে শূন্য মার্জিনে এলসি করে অবাধ পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার মতো ব্যক্ত করা হয়েছে।

বাজার সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে আকাশ পথে পেঁয়াজের যে চালান এসেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। এছাড়া এ পেঁয়াজের বাজারমূল্যও বৃহস্পতিবার কেজি প্রতি ১৪০ টাকা দৃশ্যমান হয়েছে। সঙ্গত কারণে আকাশ পথে আনা পেঁয়াজ বাজারে এখনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। এদিকে, দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের পক্ষে বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে চলমান পেঁয়াজ ঘাটতি এবং বাড়তি মূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় এনে সরকারের বিশেষ অনুরোধে তারা মিসর ও তুরস্ক থেকে বাল্ক ও কন্টেনারযোগে সমুদ্র পথে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১১ এলসির মাধ্যমে ৫৮ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে। এ এলসির বিপরীতে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেহেতু সমুদ্র পথে পেঁয়াজ আমদানিতে সময়ের প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে চাহিদা মেটাতে এস আলম গ্রুপ আকাশ পথে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্যাসেঞ্জার ও কার্গো উড়োজাহাজযোগে পৃথক দুটি এলসির মাধ্যমে ১ হাজার ৭৫০ টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। গত ২০ নবেম্বর থেকে আমদানির এ পেঁয়াজ আকাশ পথে দেশে পৌঁছাতে শুরু করেছে।

এ ধরনের আরও একটি ফ্লাইট বৃহস্পতিবার রাতে ১০৫ টন পেঁয়াজ নিয়ে বিমান বন্দরে পৌঁছেছে। এছাড়া আজ শুক্রবার কায়রো এয়ারের একটি কার্গো উড়োজাহাজযোগে আরও ৫৫ টন পেঁয়াজ ঢাকায় পৌঁছবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.