ভালোবাসার কথা ফেসবুকে বলি: মৌসুমী

066418b2aa215abbabcd11b0ee2863e9-mo_1তারকা দম্পতি মৌসুমী-ওমর সানি। ১৯৯৫ সালে অনেকটা চুপিসারেই বিয়ে করেন তাঁরা। এ বছর তাঁদের বিয়ের ২০ বছর পূর্ণ হয়েছে। দুই দশক ধরে সুখে সংসার করছে ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এ তারকা জুটি। প্রেম, বিয়ে, দাম্পত্য জীবনসহ ব্যক্তিগত আরও নানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি উত্তরার বাসায় প্রথম আলোর বিনোদন প্রতিবেদক মনজুর কাদেরের সঙ্গে কথা বলেছেন চলচ্চিত্রের প্রিয়দর্শিনী অভিনেত্রী মৌসুমী।

 

 

মৌসুমীবিয়ের আগে ও পরে…
শুরুতে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটি কেউ জানত না। ফারদিনের জন্মের আগ মুহূর্তে সবাই ব্যাপারটি টের পেয়ে যায়। বিয়ের আগে আমাদের খুব একটা প্রেম করা হয়নি। আমরা আসলে প্রেমটা করি এখন। অবশ্য ভালোবাসার কথা সামনাসামনি বলি না। ওই কথাটা আমরা ফেসবুকে বলি।

 

 

বিয়ের এত বছর পর কোনো আক্ষেপ…
আমাদের ইচ্ছে ছিল, মধুচন্দ্রিমায় সুইজারল্যান্ড যাব। আমরা মালয়েশিয়া, কাতার, দুবাইসহ অনেক দেশেই গিয়েছি, কিন্তু সুইজারল্যান্ড যাওয়া হয়নি। সুইজারল্যান্ড আলাদা আলাদাভাবে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু দুজন একসঙ্গে যেতে পারিনি। এটা নিয়ে চরম একটা আক্ষেপ রয়ে গেছে। এ ছাড়া আমাদের সেই অর্থে কোনো মধুচন্দ্রিমাও হয়নি। এই আক্ষেপও রয়েছে।

 

 

সুইজারল্যান্ড প্রিয় কেন…
দেশটি ছবির মতো সুন্দর। প্রকৃতির একটা অপরূপ সৌন্দর্য। মধুচন্দ্রিমার জন্য সেরা মনে হয়।

 

 

মৌসুমীদুজনের মধ্যে ঝগড়া…
একবারেই হয় না। ঝগড়া যে কী নিয়ে হয়, তা আমরা জানিই না।

 

 

কেমন স্বামী ওমর সানি…
আমার স্বামী অন্যদের মতো না। আজকে এই মেয়ে দেখলে হা করে পড়ে যায়, কাল ওই মেয়ে দেখলে মাথা ঘুরে পড়ে যায়-এ রকম না। শুরুতেও তেমন ছিল না, এখনো নেই। প্রথমদিকের ধারাবাহিকতা এখনো সে ধরে রেখেছে। ২০ বছর ধরে সুখে-শান্তিতে ঘর করার এটাও একটা অন্যতম কারণ। অনেক মেয়েই তাঁদের স্বামীকে নিয়ে খুব আফসোস আর দুঃখ করে। এটা ওটা নানা ধরনের কথা-বার্তা বলে। তখন খুব খারাপ লাগে। কিন্তু আমাকে আজ পর্যন্ত সানিকে নিয়ে অভিযোগ কাউকে শোনাতে হয়নি।

 

 

মৌসুমীর কাছে ওমর সানির যে বিষয়গুলো ভালো লাগে না…
ওর ভালো না লাগার বিষয়গুলো আমি ভালো লাগায় রূপান্তর করেছি। সানি খুব জোরে জোরে কথা বলে। এটা আমার ভালো লাগে না। আবার জোরে কথা না বললেও আমার ভালো লাগে না। বাসাটা খুব খালি খালি মনে হয়। সে খুব সোজাসাপ্টা কথা বলে। আমিও বলি। কিন্তু একটু কৌশল খাঁটিয়ে বললে ব্যাপারটা যে ভালো হয়, তা মানতেই রাজি নয় সানি। সে ঠুসঠাস কথা বলে ফেলে। ফিল্মে তো আসলে এসব চলে না। ফিল্ম আর পলিটিকস এই দুই জায়গাতে সরাসরি কথা বলা উচিত না। সত্যিটাই বলব, কিন্তু একটু ঘুরিয়ে বলতে হবে।

 

 

তারকা দম্পতি মৌসুমী-ওমর সানি।ওমর সানির বিশেষ কোনো নেতিবাচক দিক…
আগে খুব ভাঙচুর করত। ওর যে রাগ ছিল, ভাঙচুর করা ওর জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। এখন তা একদমই করে না। ছেলে বড় হওয়া এবং মেয়ের জন্মের পর একদম সোজা হয়ে গেছে। এখন সে কোনো কিছুই ভাঙে না। কাউকে কিছু ভাঙতে দেখলে বলে, ‘এটা ভেঙে লাভ কী? ভাঙার সঙ্গে রাগের কী সম্পর্ক!’

 

 

ওমর সানির ইতিবাচক দিক…
মানুষকে সহজে ভালোবাসে, সহজে বিশ্বাস করে। যত সহজে রাগে তার চেয়ে আগে রাগ কমে যায়। মানুষকে ক্ষমা করে দেয়। এটা আমার খুব পছন্দ।

 

 

একে অন্যকে সময় দেওয়া…
আমরা সময় খুব একটা পাই না। আগে কাজের সুবাদে আমরা একসঙ্গে হতাম। আমরা কিন্তু এখন নিজেদের অনেক সময় দিই। আমরা সেইভাবে অত বেশি কাজ করি না। তবে সানি ব্যবসা আর ছবির কাজ নিয়ে আমার চেয়ে একটু বেশি ব্যস্ত থাকে। আমরা আউটডোর শুটিংয়ে গেলে কিংবা ঢাকায় থাকলে যেটুকু সময় কাজের মধ্যে থাকি, সেটুকু সময়ই আমরা আমাদের মতো করে উপভোগ করি। একসঙ্গে শুটিং থাকলে আমরা কোনো ধরনের সাংসারিক আলাপে যাই না। সাংসারিক আলাপগুলো আমরা ফোনে ফোনে সেরে নিই। শুটিংয়ের সময় আমরা একসঙ্গে থাকলে বের হওয়ার সময় দুজন একই গাড়িতে উঠি। কখনো সানি গাড়ি চালায়, কখনো আমি।

 

 

মৌসুমীমৌসুমীর ছবি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ওমর সানির ভূমিকা…
অনুরোধ তার কাছেও আসত। তবে সানির বিচার ক্ষমতা দারুণ ছিল। সে ছবির ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তই দিতে পারত। সে আমার ভালো শুভাকাঙ্ক্ষী। স্বামী হিসেবে ছবির কাজের ক্ষেত্রে আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। সানি আমাকে সহযোগিতা না করলে, আমার কাজের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে আমি এত কাজ করতে পারতাম না। এমনকি এত দিন পর্যন্ত অভিনয় চালিয়ে নেওয়াটাও আমার জন্য মুশকিল হয়ে পড়ত।

 

 

মৌসুমীর যেসব খাবার ওমর সানির পছন্দ…
শুটিংয়ের কারণে এমনিতে খুব একটা রান্না করা সম্ভব হয় না। তবে মাঝে-মধ্যে যে রান্না করি তাতেই সে খুব খুশি হয়। আমি যা যা রান্না করি, সবই সানি পছন্দ করে। সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে খিচুড়ি, পোলাও, নোনা ইলিশ, লইট্যা শুঁটকি, বিভিন্ন ধরনের মাছের ভর্তা আর গরুর মাংস। এসব আমি সানির মায়ের কাছ থেকে শিখেছি। আমি রান্না করে দিলে সানি খুব শান্তি পায়।

 

 

সামনের দিনগুলো নিয়ে ভাবনা…
খুব বেশি কিছু ভাবি না। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর জীবন নিয়ে যদি বলি, আমরা যেভাবেই থাকি না কেন, একসঙ্গে থাকতে চাই। ছেলে-মেয়েরা বড় হবে, তারা তাদের মতো করে জীবন বেছে নেবে। আমরা যেমন বেছে নিয়েছি। তবে আমাদের মতামত কিন্তু অবশ্যই থাকবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.