বিমানের পাইলটদের ভুয়া ‘সিক’ ডিক্লারেশন বন্ধ হচ্ছে

বিমানের পাইলটদের ভুয়া ‘সিক’ ডিক্লারেশন বন্ধ হচ্ছে।

অবশেষে বন্ধ হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলটদের ভুয়া ‘সিক’ (অসুস্থ) ডিক্লারেশন।

এখন থেকে কোনো পাইলট ও কেবিন ক্রু হঠাৎ মৌখিকভাবে নিজেকে অসুস্থ ঘোষণা করে ফ্লাইট পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে পারবেন না।

নিজেকে অসুস্থ ঘোষণা করতে হলে অবশ্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিমানের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার (সিএমও) কাছে সেই রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। এছাড়া অসুস্থ ঘোষণার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবার ফিট (সুস্থ) ঘোষণার সুযোগও বাতিল করা হয়েছে।

২৬ আগস্ট বিমানের মহাব্যবস্থাপক আজিজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিল আদেশটি অবিলম্বে সব ককপিট ও কেবিন ক্রু, সিডিউলিং কর্মকর্তা এবং অপারেশনাল কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেয়ার জন্য প্রধান প্ল্যানিং ও সিডিউলিং কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।

বিমানের সব পরিচালক ও বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানকেও আদেশের কপি দেয়া হয়েছে। এ আদেশ ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অফিস আদেশে বলা হয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান।

দেশে-বিদেশে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করে থাকে। বিমানের ককপিট ও কেবিন ক্রুরা এর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বিমানের অপারেশনাল কার্যক্রম সুষ্ঠু, সুন্দর ও নির্বিঘ্ন করতে তাদের সার্বক্ষণিক শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।

এ অবস্থায় ককপিট ও কেবিন ক্রুরা হঠাৎ ‘সিক’ রিপোর্ট করলে (ছুটির দিনসহ) তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে প্রেরণ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করে তার স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যাদি দাখিল করতে হবে। বিমানের চিফ মেডিকেল অফিসার (সিএমও) এসব রিপোর্ট সংরক্ষণ করবেন।

এতদিন বিমানের এক শ্রেণির পাইলট কথায় কথায় নিজেদের ‘সিক’ ডিক্লারেশন দিয়ে ফ্লাইটে যেতেন না।

অভিযোগ রয়েছে, রুট পছন্দ না হলে কিংবা অন্য কাউকে বেকায়দায় ফেলার জন্যও ২-৩ ঘণ্টা আগে নিজকে ‘ভুয়া সিক’ ঘোষণা করে ফ্লাইট পরিচালনা থেকে বিরত থাকতেন। এ কারণে প্রায়ই বিমানের ফ্লাইট বিলম্ব হতো কিংবা সিডিউল এলোমেলো হয়ে যেত।

২০১০ সালে একযোগে অধিকাংশ পাইলট নিজেদের ‘ভুয়া সিক’ রিপোর্ট করে ফ্লাইট পরিচালনা থেকে বিরত থাকেন।

এতে বিমানের অপারেশনাল কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছিল। জানা গেছে, চার পাইলটকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে তখন একে একে ৪০ জন পাইলট ‘সিক’ রিপোর্ট করলে বিমানের সিডিউল ভেঙে পড়ে।

হজ ফ্লাইট ছাড়া অন্য ফ্লাইট পরিচালনা থেকে বিরত থাকেন তারা। পাইলটদের চাকরির বয়সসীমা ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৬২ করার আদেশ বাতিল, ওয়েট লিজ বাতিল করে ড্রাই লিজ বাস্তবায়ন, বিমানের ইনক্রিমেন্ট বন্ধের পরিকল্পনা বাতিল, চাকরিচ্যুত ২ কর্মকর্তার পুনর্বহাল, বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং মানসম্পন্ন করার দাবিতে পাইলটরা এভাবে নিজদের ‘সিক’ ডিক্লারেশন দেন।

এছাড়া সম্প্রতি বিমানের পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন পদে এক জুনিয়র কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়ার প্রতিবাদে এক রাতে বিমানের দুই প্রভাবশালী পাইলট নিজদের ‘সিক’ রিপোর্ট দেন। এর পরদিন বিমানের ঢাকা-লন্ডন ফ্লাইট পরিচালনা করতে বড় ধরনের বিপাকে পড়ে বিমান ম্যানেজমেন্ট।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.