মানুষের পেটে ইয়াবা থাকলেও শনাক্ত করতে পারবে ডগ স্কোয়াড

মানুষের পেটে ইয়াবা থাকলেও শনাক্ত করতে পারবে ডগ স্কোয়াড।

বেক্স, বো, ফিন, রক, শেম, করি, ডিজেল, ডাই। এগুলো কোন মানুষের নাম নয়। দুনিয়ার সেরা জার্মানির শেফার্ড প্রজাতির কুকুর তারা। এরা সাধারণ পোষা পশু নয়। তাদের বেশ সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে প্লেনে করে আনা হয়েছে। মানুষের মতোই তাদের রয়েছে পাসপোর্ট। ইংল্যান্ড থেকে ঢাকা আসতে লেগেছে বিশেষ ক্যাটাগরির ভিসা। এমন অভিজাত কুকুর দিয়েই গঠন করা হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডগ স্কোয়াড। বিমানবন্দরের বিশেষ নিরাপত্তায় কাজ করছে এই ডগ স্কোয়াড। এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের তত্ত্বাবধানে গঠন করা হয়েছে নিরাপত্তার এই বিশেষ ইউনিট। আপাতত ইংল্যান্ড থেকে আনা ৮টি কুকুর দিয়েই যাত্রা শুরু হয়েছে ডগ স্কোয়াডের। এর মধ্যে ৪টি জার্মান শেফার্ড কুকুর ও ৪টি ল্যাবরেডর প্রজাতির। তাদের ইতোমধ্যেই প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য ও বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্ত করতে পারঙ্গম তারা। তীব্র ঘ্রাণশক্তির বলেই তারা গন্ধ শুকেই শনাক্ত করতে পারে মাদকদ্রব্য ও বিস্ফোরক দ্রব্য।

জানা গেছে, ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করা জার্মান শেফার্ড ও ল্যাব্রাডর এবং বেলজিয়াম মেলানিয়াস জাতের আটটি ডগকে আমেরিকান দূতাবাসের এন্টি টেরিরিজম এসিস্ট্যান্সের (এটিএ) সহযোগিতায় দীর্ঘ দেড় বছর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ ডগ স্কোয়াডের টিমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে আর্মড পুলিশের ১৮ সদস্যকেও। যাদের বলা হয় ডগ হ্যান্ডলার। বিমানবন্দরের উত্তর প্রান্তে র‌্যাব সদর দফতরের পাশে একটি বিশেষ হাউজে তাদের ইউনিট। ডগ স্কোয়াডের জন্য অত্যন্ত প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ডগের গোসল খাওয়া দাওয়া বিশ্রাম ও প্রশিক্ষণের জন্য মোতায়েন রয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষক। কুকুরগুলোর খাবারের জন্য রয়েছে বিশেষ ধরনের ম্যানু। এখানে ডগ হ্যান্ডলারদের ব্যারাক তৈরির কাজ চলছে। এছাড়া ডগের খাবার তৈরির জন্য একজন বিশেষ সেফও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ডগ স্কোয়াড বিমানবন্দরে প্রবেশ-বাহির পথে তল্লাশি ছাড়াও মাদক-বিস্ফোরক শনাক্তে বিশেষভাবে কাজ করবে। এ স্কোয়াড যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নিরাপত্তা স্ট্যান্ডার্ডে আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ঘাটতি পূরণ হবে। কারও শরীর অথবা ব্যাগে মাদক কিংবা বিস্ফোরক থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ঘ্রাণ শক্তি ব্যবহার করে শনাক্ত করতে সক্ষম। এই ডগ স্কোয়াড।

আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আপাতত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডগ স্কোয়াডের যাত্রা শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরেও ডগ স্কোয়াড চালু করা হবে। কেননা গত ১৮ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অধিকতর নিরাপত্তার জন্য সব বিমানবন্দরে ডগ স্কোয়াড গঠনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে নির্দেশনানুসারেই কাজ চলছে। এভাবেই বিমানন্দরগুলোর নিরাপত্তায় ব্যাপক পরিবর্তন ও সংস্কার করা হবে।
জানা গেছে, শীঘ্রই এ ডগ স্কোয়াডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। এছাড়া আরও আটটি ডগ এ স্কোয়াডে যুক্ত হবে। ১৬টি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডগ ও ১৮ জন ডগ হ্যান্ডলার দিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা ৮টি কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেয় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এন্টি টেররিজম এসিস্ট্যান্স (এটিএ)। এর আগে বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তায় আর্মড পুলিশের অন্যতম ইউনিট ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি) এর ২৪ জন সদস্যকে জর্ডান থেকে বোম্ব ডিস্পোজাল প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। এ দুটো ইউনিটের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। এ বিষয়ে আর্মড পুলিশের অধিনায়ক রাশেদুল ইসলাম বলেন, দুনিয়াজুড়ে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বলতে মূলত বিস্ফোরক ও মাদকদ্রব্য মোকাবেলাকেই বুঝায়। শাহজালালেও এ দুটো হুমকি মোকাবেলা করা সম্ভব হলে বলা যাবে এটাই প্রধান নিরাপত্তা।

ডগ স্কোয়াডের দক্ষতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন শিমুল জানান, যেখানেই বিস্ফোরক ও মাদক থাকবে সেখানেই ঘ্রাণ শক্তির মাধ্যমেই শনাক্ত করতে পারবে ডগ স্কোয়াড। এমনকি মানুষের পেটের ভেতর ইয়াবা থাকলেও সেটা শনাক্ত করতে পারবে এসব কুকুর। এদের সেভাবেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আরও উন্নত মানের ¯œাইপার ডগ আনা হচেছ। যাদের রয়েছে প্রখর ঘ্রাণ শক্তি।

সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব বলতে বুঝায় কার্গো হাউসের মাধ্যমে কোন বিস্ফোরক ও মাদকদ্রব্য পাচার হচেছ কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া। এ জন্য ডগ স্কোয়াডকে সেভাবেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয় কার্গো ভিলেজেই। যুক্তরাজ্যের ডিএফটি-এর বিবেচনায় শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বলতে বুঝায়- কার্গো ভিলেজের মাধ্যমে পণ্য পাচারের সঙ্গে বিস্ফোরক ও মাদক পাচার ঠেকানো। নিরাপত্তার এ দিকটায় ঘাটতি ছিল বলেই তারা বছর তিনেক আগে ঢাকা থেকে সরাসরি যুক্তরাজ্যে ফ্লাইট পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এ নিয়ে দেশ বিদেশে তোলপাড় হওয়ায় বাংলাদেশ খুব দ্রুততম সময়ে সেভাবেই নিরাপত্তা ঘাটতি দূর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাজ্য। এরপর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। জোরদার করা হয় নিরাপত্তা তল্লাশি। ডিএফটির এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে রেডলাইন নামক একটি নিরাপত্তা কোম্পানি ঢাকায় দুবছর অবস্থান করে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশ্বমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। তারপর এপিবিএন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ডগ স্কোয়াড ইউনিট সংযোজন করে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে সম্প্রতি এপিবিএনকে নির্দেশ প্রদান করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মাহবুব আলী। তখন তাকে নিশ্চিত করা হয় খুব শীঘ্রর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৮টি ¯œাইপার ডগ আনা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এটিএ- বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় এ ধরনের প্রশিক্ষণ, লজিস্টিক সাপোর্ট ও অন্যান্য সহযোগিতা দিচ্ছে। এটিএ ইতোমধ্যে আর্মড পুলিশের চৌকস অধিনায়ক রাশেদুল ইসলাম খানকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সেখানকার এফবিআই সদর দফতর পরিদর্শনের পাশাপাশি তিনটি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেয়। এছাড়া হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নিয়োজিত ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের (সিআরটি) ২৪ জন সদস্যকে জর্ডান থেকে বোম্ব ডিসপোজালের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। এভাবেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় এপিবিএনকে প্রস্তুত করছে এটিএ।

আজাদ সুলায়মান, দৈনিক জনকন্ঠ

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.