বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ‘লজ্জা’

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ‘লজ্জা’।

বছরখানেক পরেই উদযাপিত হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। অর্ধশতবর্ষের যাত্রায় পর্যটন খাতের উন্নয়নে এসেছে বহুমুখী পদক্ষেপ। পর্যটনকে শিল্প হিসেবে ঘোষণার দুই যুগ পেরিয়েছে অনেক আগেই। অথচ দেশে প্রতি বছর কতজন বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে, সে পরিসংখ্যান এখনও নেই। জাতীয় পর্যটন সংস্থা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) কাছে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের কাছে তথ্য চাইলে ‘লজ্জায়’ পড়তে হয় কর্মকর্তাদের। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়ার চেষ্টা হলেও তা না পাওয়ার কথা জানিয়েছে বিটিবি। অন্যদিকে পর্যটন উন্নয়নে পরিসংখ্যানের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এমন বাস্তবতায় সরকারি তৎপরতায় অনেকটাই হতাশ এ খাতের বেসরকারি উদ্যোক্তারা।

১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের (বিপিসি) গোড়াপত্তন হয়। দীর্ঘ সময় পর ১৯৯২ সালে প্রণিত জাতীয় পর্যটন নীতিমালায় পর্যটনকে প্রথমবারের মতো শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সে নীতিমালা হালনাগাদ করে ২০১০ সালে আরও যুগোপযোগী করা হয়। দীর্ঘ সময় পেরোলেও নীতির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো এখনও উপেক্ষিত। ২০১০ সালের ১৮ জুলাই পর্যটন শিল্প এবং সেবার মান উন্নয়ন, পরিচালনা ও বিকাশের লক্ষ্যে ‘পর্যটন বোর্ড’ আইন প্রণীত হয়। সে আইনেরও বাস্তবায়ন নেই অনেক ক্ষেত্রেই। বোর্ডের কার্যাবলিতে ‘পর্যটন-সংক্রান্ত ডাটাবেজ তৈরি’ কথা বলা হলেও এ সংশ্নিষ্ট কোনো সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না।

বিটিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে বিদেশি পর্যটক আগমনের তথ্য পাওয়ার কথা। এজন্য বিভিন্ন সময়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কখনও কখনও সাড়া মিললেও বেশিরভাগ সময় তথ্য পাওয়া যায়নি। এ-সংক্রান্ত জটিলতা কাটাতে তারা চেষ্টা করছেন। কয়েক বছরের তথ্য জানতে চাইলে তিনি দিতে পারেননি।

বিটিবির অন্য এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে সম্ভাব্য একটি সংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল। এরপর আর মেলেনি। বিদেশে গেলে বিভিন্ন সংগঠন পরিসংখ্যান চাইলে দিতে পারেন না তারা। এ জন্য বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় তাদের।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি উদ্যোক্তারা বলেছেন, ২০১৬ সালে হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার পর থেকে বিদেশি পর্যটক কমছে। অনেক দেশ সে সময় বাংলাদেশের ওপর ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে। এটি এখনও অব্যাহত আছে। এ কারণে প্রতি বছর বিদেশি পর্যটক কমছে। তবে সারাদেশে কতজন বিদেশি পর্যটক আসে, তা জানা না থাকলে উন্নয়ন পরিকল্পনা কীভাবে নেওয়া হবে- এমন প্রশ্ন তাদের। এ কারণে পর্যটন এখনও অবহেলিত খাত হিসেবে রয়ে গেছে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। দেশে আসা বিদেশি পর্যটক নিয়ে কাজ করছেন বেঙ্গল ট্যুরসের নির্বাহী পরিচালক মাসুদ হোসেন। তিনি বলেন, পর্যটন পরিসংখ্যানের ব্যাপারে বহুবার ট্যুরিজম বোর্ড ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে বলেছি। কোনো কাজ হয়নি। ভবিষ্যতে হবে কি-না তাও জানি না। দীর্ঘ যাত্রায় এখন হতাশ হওয়া ছাড়া আর কী করার আছে!

ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, যে পরিমাণ বিদেশি বাংলাদেশে প্রবেশ করে সে তথ্য পুলিশের বিশেষ শাখাকে তারা পাঠিয়ে দেন। এখন পর্যটন মন্ত্রণালয় কেন পায় না, সে ব্যাপারে তারা জানেন না।

এদিকে দেশের প্রত্ন-নিদর্শনগুলোতে ভ্রমণকারী বিদেশি পর্যটকের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে পরিসংখ্যান তৈরি করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। সংস্থাটির হিসেবে ২০১৭-১৮ সালে আসা বিদেশি পর্যটক ছিলেন ১৩ হাজার ৪৮৫ জন।

এ ব্যাপারে পর্যটন উদ্যোক্তা মাসুদ হোসেন বলেন, এ সংখ্যা সারাদেশে আসা পর্যটকের চিত্র নয়। একই পর্যটক একাধিক প্রত্নস্থান পরিদর্শন করলে তাকে একাধিকবার গণনার আওতায় আনা হয়। তাই এ হিসাবে গরমিল আছে। অন্যদিকে সুন্দরবনসহ বনাঞ্চলে ভ্রমণকারী পর্যটকের আগমনের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান রয়েছে বন বিভাগের। তাদের হিসাবে ২০১৭-১৮ সালে পর্যটক ছিলেন প্রায় আড়াই হাজার।

সূত্রঃ সমকাল

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.