নেতাকর্মীদের কাছে মির্জা ফখরুলের কৈফিয়ত

নেতাকর্মীদের কাছে মির্জা ফখরুলের কৈফিয়ত।

খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি কেন একদাশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিল- সে বিষয়ে নেতাকর্মীদের কৈফিয়ত দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনকে আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম। আমাদের গণতন্ত্রের মাতা (খালেদা জিয়া) কারাগার থেকেই আমাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন তারই নির্দেশে আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, আমাদের সাধারণ সভায় তিনি পরিষ্কার করে বলে গিয়েছিলেন যে, দলমত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে গণতন্ত্রের পক্ষে ঐক্য গড়ে তুলতে এবং এই ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করতে ঐক্য নিয়ে লড়াই করতে হবে। এবং নির্বাচনের পরও তিনি এই ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করার নির্দেশনা দিয়েছেন।’
বিএনপির সাবেক সভাপতি কে এম ওবায়দুর রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। কে এম ওবায়দুর রহমান স্মৃতিসংসদ এই স্মরণসভার আয়োজন করে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করতে হলে সমস্ত জনগণের ঐক্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। জনগণের ঐক্য এবং সম্মিলিত প্রয়াস ছাড়া এই ফ্যাসিবাদ স্বৈরাচারকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরাজিত করার কোনো সুযোগ নেই।’

‘আবেগ দিয়ে যুদ্ধ জয় করা যায় না’ এমন মন্তব্য করে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, আন্দোলন-সংগ্রামে জয়ী হতে সমগ্র মানুষকে এক করতে হবে। আমরা নির্বাচনের যাওয়ার পূর্বে নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, নির্বাচনে যেতে হবে এবং জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এমনকি নির্বাচনের পর তিনি এই নির্দেশ দিয়েছেন যে, এই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এখানে অনেকে অনেক কথা বলছেন। আমরা দেখেছি নেত্রী গ্রেফতার হওয়ার পর যখন আমরা কর্মসূচি দিয়েছি দেখেছি কতজন এসেছেন, কতজন আসেননি। আমরা তো দেখেছি কারা কারা কর্মসূচি থেকে আস্তে আস্তে চলে গেছেন। আমরা তো দেখেছি এই নির্বাচনের মধ্যে কারা বেরিয়ে এসে প্রতিবাদ করেছেন। সুতরাং শুধুমাত্র কথা বলে একটি আবদ্ধ ঘরের মধ্যে নিরাপদ জায়গায় এসব কথা বলে শত্রুকে পরাজিত করতে পারবো না।’

ফখরুল বলেন, ‘আজ সুপরিকল্পিতভাবে জনগণের ঐক্যকে ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মধ্যদিয়ে জনগণ যেভাবে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে জনগণ বর্জন করেছে, সেই ঐক্যকে ভাঙতে চেষ্টা করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, দেশনেত্রীর নির্দেশে এই ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করবো এবং এই শক্তিকে পরাজিত করবো। ঐক্য ভেঙে গেলে আর কোনোদিন সরাতে পারবো না। সে জন্য ছোটখাটো সমস্যাকে বড় করে না দেখে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’

বিএনপিকে ভাঙতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ তুলে ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি কোনোদিন নিঃশেষ হবে না। বিএনপির রাজনীতি জনগণের রাজনীতি। এর আগে অনেকে বিএনপিকে ভাঙতে চেয়েছিল। এরশাদ সরকার ভাঙার চেষ্টা করেছে। এরপর আওয়ামী লীগও ভাঙতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। আবারও এখন ভাঙতে চেষ্টা করছে। কিন্তু একজন কর্মীকেও সরিয়ে নিতে পারেনি। এখন সময় কঠিন। এই কঠিন সময়ে অত্রিক্রম করতে হবে অত্যন্ত ধৈর্য ও সাহস নিয়ে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের এক পর্যায়ে দর্শক সারি থেকে ডায়াসে বসা নেতাদের কাছে বিচ্ছিন্নভাবে প্রশ্ন আসতে থাকে। এ সময় মির্জা ফখরুল একজন প্রশ্নকারীকে ডায়াসে তার কাছে আসার আহ্বান জানালে ছাত্রদলের ঢাকা কলেজ শাখার সহ-সভাপতি এইচ এম রাশেদ ফখরুলের কাছে এসে প্রশ্ন করেন- ম্যাডামের (খালেদা জিয়ার) মুক্তির দাবিতে কোনো কর্মসূচি নেই কেন?

জবাবে ফখরুল বলেন, ‘হু টোল্ড ইউ’। রাশেদ আবার বলেন, ‘ম্যাডামের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি নেই তো’। এবার ফখরুল বলেন, ‘কে বলেছে আপনাকে এই কথা। অবশ্যই মুক্তি চাওয়া হয়েছে। ডোন্ট টেল এ লাই।’ পরে কয়েকজন নেতাকর্মী রাশেদকে তার জায়গায় সরিয়ে দেয়।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি টিএস গিয়াসউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতাদের মধ্যে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শ্যামা ওবায়েদ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ। এছাড়াও নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব বক্তব্য রাখেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.