ফেসবুক পোস্টে সারা বিশ্বে প্রশংসিত নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট অধিনায়ক

শান্তির দেশ বলে পরিচিত নিউজিল্যান্ড বাকরুদ্ধ। ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলার ঘটনাটি মেনে নিতে পারছেন না কেউ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশটির নাগরিকরা বারবার যে কথাটি জানাতে চাচ্ছেন – আমরা নিউজিল্যান্ডবাসী এমন নই, আমরা সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাসী নই, আমরা শান্তিকামী।

এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করে দেশটির সেলিব্রেটিরা বলছেন, মুসলমান অধিবাসীরা! আপনারা ভয় পাবেন না, আপনারা আরও বেশি বেশি মসজিদে নামাজ পড়তে যান।

এমনই একটি বার্তা দিয়েছেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়ক কেন উইলয়ামসন। তিনি একটি ছবি পোস্ট করেছেন যা রীতিমত ভাইরাল। সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে ছবিটি।

১৭ মার্চ কেন উইলিয়ামসনের শেয়ার করা ওই ছবিটি দেশটির জাতীয় প্রতীক সিলভার ফার্নের।

তবে ফার্নের পাতাটিতে রয়েছে ভিন্নতা, যা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কেড়েছে। ফার্নের শিড়দাড়ায় দাঁড়িয়ে নামাজরত মুস্ললিরা। প্রতি মুসল্লির রয়েছে প্রতিচ্ছবি। এভাবেই দেশটির জাতীয় প্রতীকের আদলে তিনি তৈরি করেছেন নামাজের কাতার। নামাজরত কাতারবন্দী মানুষের বিপরীতে মানুষের প্রতিচ্ছবি যা বিনয় প্রকাশ করছে।

ছবির ক্যাপশনে কেন উইলিয়ামসন লিখেছেন, ‘নিউজিল্যান্ডের অন্যান্য বাসিন্দাদের মতো আমিও বুঝে উঠতে পারছি না যে এটা কী ঘটল! এটা বুঝতে পেরেছি যে আমাদের দেশে ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা কখনও তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আমি আমার একাগ্রতা সব ভুক্তভোগী, নিহতের পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষী, মুসলিম সম্প্রদায় ও এ ঘটনায় আঘাত পাওয়া অন্য নিউজিল্যান্ডবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে চাই। চলুন আমরা সবাই এক হই।’

এরপর ছবিটির নিচে হ্যাশট্যাগ দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘হ্যালোব্রাদার।’ ছবিতে আরও লেখা রয়েছে, ‘স্ট্যান্ডিং ইন সলিডারিটি। ১৫ মার্চ ২০১৯।’ যার অর্থ-১৫ মার্চের ঘটনায় সংহতি প্রকাশ।

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট অধিনায়কের এই পোস্টটি এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার লাইক পড়েছে। ২১ হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে।

কেন উইলিয়ামসনের ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

তিনি এর বিশ্লেষণ করে ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘সিলভার ফার্ন নিউজিল্যান্ডের জাতিসত্তার প্রতীক। নামাজ পড়া মানুষরাও একসঙ্গে একটা সিলভার ফার্ন। অসাধারণ মানবিক গুণসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রীর দেশটিতে সাধারণ মানুষরা এই অভিব্যক্তি তুলে ধরে দাঁড়িয়েছেন বেদনায় বাকরুদ্ধ মুসলমানদের পাশে। শিখে নিই, এভাবে দাঁড়াতে হবে আমাদের সবাইকে। সব ধরনের অমানুষিকতা আর বর্বরতার বিরুদ্ধে।’

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত ডানপন্থী শেতাঙ্গ সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্টের গুলিতে ৫০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন অন্তত ৪৮ জন।

এ ঘটনায় অল্পের জন্য বেঁচে যান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা। কাছাকাছি লিনউড মসজিদেও দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। শান্তির দেশে এমন জঘন্য হামলার ঘটনায় গোটা বিশ্ব স্তম্ভিত।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডেন এই হামলাকে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায় বলে অভিহিত করেছেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.