সারা ভারতজুড়ে এক দাবি ‘প্রতিশোধ’

সারা ভারতজুড়ে এক দাবি ‘প্রতিশোধ’

সংকটময় মুহূর্তে সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে নজির স্থাপন করল ভারতের বিরোধী দল। রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে সব রকম সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলা নিয়ে আগামী দিনে কেন্দ্রের পদক্ষেপকেও সমর্থন জানাবে তারা।
দল-মত নির্বিশেষে পুরো ভারতের এখন একটাই দাবি, কঠিন প্রতিশোধ। শনিবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সর্বদলীয় বৈঠকে এ বার্তাই দিল বিরোধীরা। এ হামলার পর গোটা দেশ ক্ষোভে ফুঁসছে।
‘বদলা চাই’ আওয়াজ উঠছে দেশের প্রতিটি কোণা থেকে। বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হচ্ছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়ছে দেশবাসীর। শনিবার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ার, তৃণমূল সংসদ সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ ব্রায়েন, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লাহ, শিবসেনার সঞ্জয় রাউত, এলজেপি প্রধান রাম বিলাস পাসোয়ান এবং সংসদীয় বিষয়কমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর।
বৈঠকে এক প্রস্তাবে বলা হয়, ‘সব দল এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। এই শোকের মুহূর্তে গোটা দেশ ওই পরিবারগুলোর পাশে রয়েছে।’ সন্ত্রাস দমনে কংগ্রেস পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে কেন্দ্রকে। কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি বলেন, ‘কাশ্মীর হোক বা দেশের অন্য কোনো প্রান্ত, সন্ত্রাস নিশ্চিহ্ন করতে কংগ্রেস সরকারের পাশেই থাকবে।’ একই সুর বাকি দলগুলোর গলাতেও।
শুক্রবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি বলেছিলেন, ‘এটা একটা সংকটময় মুহূর্ত। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে একজোট হয়ে লড়তে হবে।’ এদিকে, কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্ন দেখেছেন তা কখনোই পূরণ হবে না বলে জানিয়েছেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি।
শনিবার জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের এ মন্ত্রী বলেন, ‘জার্মানি, কানাডা, উজবেকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আফগান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এতে স্পষ্ট, পাকিস্তানকে ভারত যে কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নের দাবি করেছে সেটি ব্যর্থ হয়েছে।’
এ ঘটনায় ভারতের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে ফোন করে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, সীমান্ত সন্ত্রাস মোকাবেলায় নিজেদের সুরক্ষিত রাখার অধিকার আছে নয়াদিল্লির। প্রাণঘাতী এ হামলার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করতে যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকবে বলেও বোল্টন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এদিকে ভারতজুড়ে হাজার হাজার মানুষ নিহত সেনাদের প্রতি শোক জানিয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে শনিবার তাদের লাশ পৌঁছায়। নিহত সেনাদের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের কানৌজ ও আগ্রা, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ডের উদামসিংনগর ও দেরাদুন, পাঞ্জাবের রূপনগর ও গুরুদাসপুর, উড়িষ্যা, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তামিলনাড়ু ও কলকতায়।
তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসব এলাকায় ছিল জনতার উপচে পড়া ভিড়। জওয়ানদের স্মরণে পথে নামেন পশ্চিমবঙ্গ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। শনিবার বিকাল চারটে নাগাদ হাজরা মোড় থেকে গান্ধীমূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত মোমবাতি হাতে একটি মৌন মিছিলে যোগ দেন তিনি।
এদিকে পুলওয়ামার পর ফের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল জম্মু-কাশ্মীর। দু’দিনের মাথায় শনিবার ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল এবার রাজৌরির নওসেরায়। বিস্ফোরণে এক সেনা অফিসারের মৃত্যু হয়েছে।
বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হয়েছেন আরও এক জওয়ান। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, নওসেরা সেক্টরে আইইডি নিষ্ক্রিয় করতে গিয়েছিলেন ওই সেনা অফিসার। তখনই বিস্ফোরণ ঘটে। নওসেরা সেক্টরে ভারত-পাক সীমান্ত থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ওই বিস্ফোরক রাখা ছিল। সেনা সূত্রে আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বর্ডার অ্যাকশন টিম ওই আইইডি রেখেছিল। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বিশাল বাহিনী।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.