জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে চাপে পড়বে দেশের অর্থনীতি

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে চাপে পড়বে দেশের অর্থনীতি।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের সার্বিক অর্থনীতি চাপে পড়বে। দামের কারণে তেল আমদানি খরচ বাড়বে। এতে বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয়ও।
এদিকে বিদেশি মুদ্রার আয় বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে দেশের রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়বে। এর প্রভাবে টাকার মান কমে যেতে পারে, যা মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ তৈরি করবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক রিপোর্টে এমন আভাস দেয়া হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির চিত্র ও দেশের সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকলে সরকারের লোকসানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। তখন স্থানীয় বাজারে এর দাম সমন্বয় করতে হবে।
এতে পণ্যের দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ অবস্থায় অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষণা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেলে অর্থনীতির হিসাব-নিকাশ পাল্টে যায়। তেলের দাম বৃদ্ধিতে সব দেশে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ে, এ কারণে বাংলাদেশেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেজন্য আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলো ভেবে দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। প্রতি বছর গড়ে ১০ থেকে ১২ শতাংশ হারে এ চাহিদা বাড়ছে। গত বছর ৫৮ লাখ টন তেল আমদানি করা হয়েছিল। চলতি বছরে এর পরিমাণ বেড়ে ৬৪ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে। আগামী বছরে এর পরিমাণ বেড়ে ৭০ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তেল আমদানি বেশি হওয়ায় ব্যয়ও বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৪২ কোটি ডলারের জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় এ খাতে ব্যয় বেড়েছিল ৩২ শতাংশ। চলতি অর্থবছর ৩০ শতাংশের বেশি খরচ বাড়বে।
জুলাই-অক্টোবর সময় জ্বালানি তেল আমদানি ব্যয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২৪ শতাংশ এবং এলসি খোলার হার বেড়েছে ৩৪ শতাংশ।
সূত্র জানায়, জ্বালানি তেল এখন শুধু পরিবহন ও কৃষি খাতেই নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে মোট জ্বালানি তেলের ৪৬ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। বিদ্যুৎ খাতে ২৫ শতাংশ, কৃষিতে ১৭ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ১২ শতাংশ।
বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম সর্বোচ্চ ৫৮ মার্কিন ডলার। এক সপ্তাহ ধরে এর দাম ৫০ থেকে ৫৮ ডলারে ওঠানামা করছে।
বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি তাদের এক প্রতিবেদনে পূর্ভাবাস দিয়েছে, আগামী বছরের মধ্যে এই দাম বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৭২ ডলারে উঠতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে প্রতি ব্যারেলের মূল্য ১০০ ডলারেও উঠতে পারে।
সূত্র জানায়, দেশের মোট আমদানি ব্যয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ যায় জ্বালানি খাতে। মূল্য বৃদ্ধি পেলে এটি ২৫ শতাংশে ওঠে। তখন ভর্তুকি দিয়ে তেল বিক্রি করতে হয়।
ফলে সরকারের খচর বেড়ে যায়। তখন সমন্বয় করতে তেলের দাম বাড়ানোর চাপ থাকে। কেননা এ খাতে সরকারের ভর্তুকি বাড়ানোয় বাজেট ঘাটতি সৃষ্টি হয়।
এ ঘাটতি মেটাতেই বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর চাপ বাড়ে। আবার তেলের দাম বাড়ালে সব খাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
এর প্রভাবে পণ্যের দাম বাড়ে। তখন রফতানিতেও যেমন সমস্যা দেখা দেয়, তেমিন দেশের বাজারে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ে।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অর্থনীতিতে চাপ কমাতে বহুমুখী জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। যখন যেটির দাম কম তখন সেটি ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই জ্বালানি নিয়ে অর্থনীতিতে চাপ এড়ানো সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের বিকল্প হিসেবে এখন কয়লা, বিদ্যুৎ, গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া জৈব জ্বালানির ব্যবহার বাড়বে। বাংলাদেশকে এসব দিকেও নজর দিতে হবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.