ইঞ্জিনে পাখির আঘাত লাগায় ২৪ দিন ধরে দাম্মাম বিমানবন্দরে গ্রাউন্ডেড ‘রাঙ্গাপ্রভাত’

ranga-provatইঞ্জিনে পাখির আঘাত লাগায় সৌদি আরবের দাম্মাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের রাঙ্গাপ্রভাত নামে একটি বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ (রেজিস্ট্রেশন নং-এস২-এএইচএন) বিকল হয়ে পড়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি। পরবর্তীতে ইঞ্জিন সারিয়ে উড়োজাহাজটি সচল করতে দেশটিতে ১০ জন প্রকৌশলী পাঠায় বিমান। বিকল হয়ে পড়ার পর থেকে দাম্মাম বিমানবন্দরেই গ্রাউন্ডেড অবস্থায় রয়েছে উড়োজাহাজটি। ২৪ দিন ধরে উড়োজাহাজটি বহরের বাইরে থাকায় আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি শিডিউল বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে বিমান।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৭ নভেম্বর বিমানের রাঙ্গাপ্রভাত নামের উড়োজাহাজটিতেই চড়ে হাঙ্গেরির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পথিমধ্যে উড়োজাহাজটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ওই সময় তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাতে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয় রাঙ্গাপ্রভাত। পরে অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, বিমান কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণেই উড়োজাহাজটিতে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। কয়েকজনকে এজন্য শাস্তির মুখোমুখিও হতে হয়। ওই সময়ের পর থেকেই দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়ছে না উড়োজাহাজটির।

জানা গেছে, রাঙ্গাপ্রভাতের ইঞ্জিন ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকল হলেও বিমানের প্রকৌশলীরা সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হন ১৪ মার্চ। প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার রুহুল কুদ্দুস ফারুকের নেতৃত্বে বিমানের প্রকৌশলীরা বর্তমানে উড়োজাহাজটির মেরামতকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, দাম্মামে গ্রাউন্ডেড থাকা উড়োজাহাজটি বহরে ফিরিয়ে আনতে সম্ভাব্য সব রকম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিমানের ১০ জন প্রকৌশলীকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছে। বোয়িংয়ের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ইঞ্জিনটি মেরামত করছেন তারা। আশা করা যায়, ২২ মার্চের মধ্যেই উড়োজাহাজটি সচল করতে সক্ষম হবেন প্রকৌশলীরা।

দুর্ঘটনার প্রায় ১৭ দিন পর প্রকৌশলীদের সৌদি আরব যাওয়া প্রসঙ্গে শাকিল মেরাজ বলেন, ভিসা জটিলতার কারণে প্রকৌশলীরা সৌদি আরব যেতে পারছিলেন না। আবার দাম্মাম বিমানবন্দরে গিয়েও প্রকৌশলীরা দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এ কারণে উড়োজাহাজটি সচল করতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হচ্ছে।

আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দেশে ফিরে আসার পরই ক্ষতির পরিমাণ প্রসঙ্গে জানা যাবে। তবে ক্ষতি যা-ই হবে, ইন্স্যুরেন্স বাবদ তা ফেরত পাবে বিমান কর্তৃপক্ষ।

এদিকে রাঙ্গাপ্রভাত ছাড়াও বর্তমানে বিমানের আরো দুটি উড়োজাহাজ বহরের বাইরে রয়েছে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে ডি-চেকের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে ভাড়া নেয়া বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ইআর উড়োজাহাজটি সে দেশে পাঠানো হয়েছে। ৩০ মার্চ ডি-চেক শেষে উড়োজাহাজটি বহরে ফিরবে বলে জানিয়েছে বিমানের প্রকৌশল বিভাগ।

অন্যদিকে মিসরের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া নেয়া বিমানের আরেকটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজেও দেখা দিয়েছে ইঞ্জিনের সমস্যা। ইঞ্জিন মেরামত করে উড়োজাহাজটি কবে নাগাদ সচল হবে, সেটি এখনো বলতে পারছে না বিমান কর্তৃপক্ষ।

তিনটি উড়োজাহাজ বহরের বাইরে থাকায় তীব্র সংকটে পড়ে গেছে বিমান। এ পরিস্থিতিতে মারাত্মক ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থাটিকে। এমনকি যাত্রী কম হলে নিয়মিত ফ্লাইটও বাতিল করা হচ্ছে। ফলে যাত্রীরাও পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে, যা বহাল রয়েছে মার্চজুড়ে।

তবে বিমানের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বিমানের বহরে ওয়েট লিজে উড়োজাহাজ গ্রহণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়ে রয়েছে। সেটি হয়ে গেলেই উড়োজাহাজ সংকট কিছুটা হলেও কমবে। লিজের জন্য আরএফপি, টেন্ডার, বোর্ডের অনুমোদনসহ পূর্বপ্রস্তুতির কাজও শেষ বলা চলে।

উল্লেখ্য, বিমানের বর্তমান বহরে রয়েছে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর, চারটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ইআর ও দুটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ।

সূত্রঃ দৈনিকবণিক বার্তা

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.