যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে শীর্ষে বাংলাদেশ

base_1486494867-5যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে ভারতে পর্যটক গমনের দিক থেকে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো প্রতিবেশী দেশটির বিদেশী পর্যটক আগমন খাতে আয়ের প্রধান উত্স হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এ তথ্য জানিয়েছে।
ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয় জানায়, দেশটির পর্যটন খাতে এত দিন সবচেয়ে বেশি বিদেশী ভ্রমণকারী এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তবে গত বছর এ ধারা ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে এখান থেকে ভারতে গেছেন ১৩ লাখ ৭০ হাজার পর্যটক। এ সময় ভারতে ২০১৫ সালের তুলনায় বাংলাদেশী পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে ২১ শতাংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে পর্যটক সংখ্যা বেড়েছে যথাক্রমে ৮ দশমিক ২ ও ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। ভারতে পর্যটক গমনের হিসাবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দ্বিতীয় ও যুক্তরাজ্যের তৃতীয়। বাংলাদেশ থেকে বিপুল হারে পর্যটক গমনের কারণ হিসেবে ভারতের উন্নত চিকিত্সা ব্যবস্থার সুযোগ গ্রহণ ও ব্যবসা বাণিজ্য-সংক্রান্ত ভ্রমণকে চিহ্নিত করেছে দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয়।
গত কয়েক বছরে ভারতে বাংলাদেশী পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। ২০১২ সালেও দেশটিতে যাওয়া বাংলাদেশী পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪ লাখ ৮০ হাজার। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন গুণ। ২০১৬ সালে দেশটিতে ভ্রমণকারী মোট পর্যটকের সংখ্যা ৮৮ লাখ ৯০ হাজার। এর মধ্যে বাংলাদেশী ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অংশ যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৭৪ ও ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ।
ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে মোট ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৪টি চিকিত্সা ভিসা ইস্যু করেছিল দেশটি, এর মধ্যে অর্ধেকই ইস্যু হয়েছিল বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য। এর পর ২০১৬ সালের প্রথমার্ধেই ভারতে চিকিত্সা
ভিসার আওতায় গমনকারীর সংখ্যা ৯৭ হাজারে পৌঁছে যায়।
এর আগে কেপিএমজির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে চিকিত্সাসেবা নিতে যাওয়া পর্যটকের মধ্যে বাংলাদেশীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। স্থানীয় চিকিত্সা খাতে নিম্নমানের সেবা ও দক্ষ জনবলের অভাবে বাংলাদেশীদের ভারত ভ্রমণ বেড়েছে।
এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে, দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ দৃঢ় করতে এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে হাইকমিশন। দেশে চালু আটটি ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রে (আইভিএসি) এখন আর কোনো ধরনের ই-টোকেনের প্রয়োজন নেই। ভিসা নিয়ে নানা অভিযোগের সমাধান, দালালদের দৌরাত্ম্য হ্রাস ও ভিসাপ্রাপ্তি সহজতর করতে এসব কেন্দ্রে এ প্রথা বাতিল করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ভিসাপ্রার্থীকে অবশ্যই বিমান, সড়ক বা রেলপথে যাতায়াত নিশ্চিতের টিকিট নিয়ে আসতে হবে।
এর আগে ২০১৬ সালে ঈদ সামনে রেখে পর্যটক ভিসার জন্য ৫৬ হাজার ৩১৮ জনের আবেদন গ্রহণ করেছিল ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন। ২০১৬ সালের ৪ জুন থেকে ১২ দিনে ঈদ ভিসা ক্যাম্পে আবেদনকারীরা ‘ই-টোকেন’ ছাড়াই সরাসরি আবেদনপত্র জমা দেয়ার সুযোগ পান। এসব আবেদনকারীকে এক বছরের জন্য মাল্টিপল ভিসা দেয়া হয়েছে। এ সময়ে ভিসা ক্যাম্পের বাইরেও ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের (আইভিএসি) স্বাভাবিক কার্যক্রম চলে। এর ফলে ২০১৬ সালের জুন মাসে বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা ইস্যুর সংখ্যা ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজারে দাঁড়ানোর পূর্বাভাস দিয়েছিল হাইকমিশন।
প্রসঙ্গত, ভারতের পর্যটন ভিসা আবেদনের জন্য ‘ই-টোকেন’ ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে বেশকিছু দালাল চক্র সক্রিয় ছিল। ই-টোকেনের ব্যবস্থা করে দেয়ার নাম করে আবেদনপত্রপ্রতি পাঁচ-সাত হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিত তারা। এছাড়া ভিসাসংক্রান্ত অন্যান্য সেবা দেয়ার নাম করেও বাণিজ্য করত এসব চক্র। এ দালাল চক্রের অপতত্পরতা রুখতে ভারতীয় হাইকমিশন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার মধ্যে— ই-টোকেন ছাড়াই ঈদ ভিসা ক্যাম্পে আবেদনপত্র জমা দেয়া, মোবাইল ফোনে পাসওয়ার্ড ও সাক্ষাতের তারিখ এসএমএস (ক্ষুদে বার্তা) আকারে পাঠানো, নারী আবেদনকারীদের ভিসা আবেদন সরাসরি জমা গ্রহণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.