জানমাল রক্ষায় সাঁওতালদের সম্বল শুধু তীর-ধনুক

gaibandha-saotal320161217133609-1জীবন-জীবিকার তাগিদে সাঁওতালদের প্রধান পেশা ছিল বণ্যপ্রাণী শিকার। হাতে তীর-ধনুক নিয়ে গ্রাম ঘুরে ঝোপ-জঙ্গল থেকে শিকার করতেন বণ্যপ্রাণী। কিন্তু কালের পরিবর্তনে সাঁওতালদের এখন পেশাও পরিবর্তন হয়েছে। তবে তাদের প্রত্যেকের এখনো রয়েছে তীর-ধনুক। বর্তমানে শত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচতে জানমাল রক্ষায় সাঁওতালদের একমাত্র সম্বল তীর-ধনুক।

৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমিতে বসতি গড়ে তোলা সাঁওতালদের ওপর হামলা, আগুন, গুলি, লুটপাট ও উচ্ছেদের পর থেকে নিজেদের নিরাপত্তা আর অবশিষ্ট সম্পদ রক্ষার্থে দিনরাত হাতে তীর-ধুনক নিয়ে পাহারা বসিয়েছেন সাঁওতালরা।

ঘটনার এক মাস ১০ দিন অতিবাহিত হলেও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের মাদারপুর ও জয়পুরপাড়ার সাঁওতালপল্লীতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেয়া সাঁওতালদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি এখনো। প্রতিনিয়ত হুমকি, গ্রেফতারের ভয় ও আবারো হামলার আশঙ্কায় তারা তীর-ধনুকের সঙ্গে দা, কুড়াল ও লাঠি নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন।

শনিবার দুপুরে মাদারপুর সাঁওতালপল্লীতে ঢুকতেই হাতে তীর-ধনুক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সাঁওতালরা প্রথমে নাম-পরিচয় জানতে চান। এরপর কোথা থেকে কেন আসা হয়েছে তা জানালে তারা সাঁওতালপল্লীতে যেতে দেন।

এরপর মাদারপুর সাঁওতালপল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, গির্জার সামনে খোলা আকাশের নিচে শত শত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবার ত্রিপল (তাঁবু) দিয়ে ঘেরা ডেরা, কাপড়ের ছাউনির ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছে। দিনের আলোতে ভালো থাকলেও সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভয় ও আতঙ্ক বাড়তে থাকে তাদের। এছাড়া কয়েকদিনের শীতে এসব সাঁওতাল খোলা আকাশের তাঁবুর ডেরার মধ্যে জবুথবু অবস্থায় দিনাতিপাত করছে।

মাদারপুর ও জয়পুরপাড়ার পুরো সাঁওতালপল্লীর রাস্তা, বিভিন্ন মোড় ও খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেয়া জায়গার একটু ফাঁকে ফাঁকে হাতে তীর-ধনুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সাঁওতালরা। অনেকে জীবনের নিরাপত্তার জন্য নতুন করে তীর-ধনুক তৈরি করছেন।

মাদারপুর সাঁওতালপল্লীতে নিজের তাঁবুর সামনে বসে ধনুক তৈরি করছিলেন ময়রা হেমরন। তিনি বলেন, উচ্ছেদ ঘটনার পর থেকে সাঁওতালরা ভয় আর আতঙ্কে ভুগছে। সেই সঙ্গে হামলায় সবাই জানমাল হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। আমাদের কাছে যে পরিমাণ তীর-ধনুক আছে তা দিয়ে কোনো হামলা বা শত্রুর মোকাবেলা সম্ভব নয়। তাই নতুন করে অনেকে এখন তীর-ধনুক তৈরি করছেন।

কিসরো সরেন বলেন, জীবন রক্ষার জন্য এখন দিনরাত হাতে তীর-ধনুক নিয়ে থাকতে হচ্ছে। কখন কীভাবে আমাদের ওপর হামলা হবে তা জানি না। তাই জীবন ও নিজেদের শেষ সম্বল রক্ষার জন্য তীর-ধনুকই এখন একমাত্র হাতিয়ার।

তবে এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, সাঁওতালপল্লীতে আশ্রয় নেয়া সাঁওতালদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের নজরদারি রয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.