বিমানের সাসপেন্ড ৬

biman20161130184239প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়ে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বিমানের প্রকৌশল বিভাগের ৬ প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- রুকুনুজ্জামান, সামিউল হক, লুৎফুর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস, সিদ্দিকুর রহমান ও জাকির হোসেন। বুধবার রাতে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সন্ধ্যায় সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

এ সময় মন্ত্রী সাময়িক বরখাস্তদের নাম না জানালেও পরে বিমান থেকে নিশ্চিত করা হয়, রাতেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অধিকতর তদন্তে আরও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদেরও সাসপেন্ড করার মতো শাস্তি দেয়া হতে পারে।

মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলা ও ম্যানেজমেন্টের অদক্ষতার কারণে এ ত্রুটি হয়েছে। করাচী ক্রস করার পর যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। ত্রুটিটি ছিল : বিমানের ইঞ্জিনে অয়েল (লুব্রিকেন্ট) সিস্টেমের একটি নাট- বোল্ট অর্ধেক খোলা ছিল। ওই ঢিলা অংশ দিয়ে ইঞ্জিন থেকে লুব্রিকেন্ট বেরিয়ে যায়। এতে ওই ইঞ্জিনে জিরো হয়ে যায় অয়েল। যার কারণে বাধ্য হয়ে ফ্লাইটটির গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে বিমানের ৬ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সময় বিমানের চীফ অব টেকনিক্যাল ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

মন্ত্রী তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সামনে রেখে সারমর্ম পাঠ করেন। এ সময় বিমানের বর্তমান দুরবস্থার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা অবশ্যই অদক্ষতার বিষয়। এতে কিছুটা হলেও বিমানের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ হয়েছে। প্রয়োজনে বিমানকে ঢেলে সাজান হবে। এ নিয়ে কোন ধরনের গাফিলতি বরদাশত করা যাবে না।

তিনি জানান, প্রতিবেদনে দায়িত্বে অবহেলার জন্য ৬ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়েছে। সে মোতাবেক রাতে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ রিপোর্টে তিনটি বিষয় খতিয়ে দেখা হয়- পরিবেশগত সমস্যা, কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা ও যান্ত্রিক গোলযোগ। রিপোর্টে উঠে এসেছে, কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণেই যান্ত্রিক ত্রুটি হয়েছে। এ তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, চীফ অব ফ্লাইট সেফটি ক্যাপ্টেন সোয়েব চৌধুরী, ডেপুটি চীফ অব ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হানিফ ও ম্যানেজার (কোয়ালিটি এস্যুরেন্স) নিরঞ্জন রায়।

রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় বিমানের সদর দফতরে বসে এ ৬ জনকে সাময়িক বরখাস্তের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ব্যতিব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাত এগারোটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পূর্ব মুহূর্তে বিমান তাড়াহুড়া করে এ সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন দিনভর বিষয়টি মনিটর করেন। যদিও তিনি বলেছেন, তিনটির মধ্যে একটি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট একদিন আগেই সম্পন্ন করতে হয়েছে। বাকি দুটো তদন্ত প্রতিবেদনও এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে। সব প্রতিবেদনের আলোকে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা যায়, বরখাস্তকৃত ৬ জন বিমান প্রকৌশল বিভাগের অধীন রক্ষণাবেক্ষণে শাখার কর্মকর্তা। তারাই প্রধানমন্ত্রীর ভিভিআইপি ফ্লাইট রাঙ্গা প্রভাতের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেছেন। গত ২৭ নবেম্বর ঢাকা থেকে বুদাপেস্ট যাবার পথে রাঙ্গা প্রভাতের ইঞ্জিনের অয়েল ইউনিটের একটি নাট ঢিলা (লুজ) হবার কারণেই দ্রুত অয়েল প্রেসার কমে যাওয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। এতে তুর্কমেনিস্তানে জরুরী অবতরণ করতে হয় ওই ফ্লাইটকে। এ ঘটনায় দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন তৎপর হয়ে বিমান পর্ষদ চেয়ারম্যান ও এমডির সঙ্গে কথা বলেন। তার নির্দেশে লন্ডনগামী বিমানের অপর একটি ফ্লাইট তুর্কমেনিস্তানে ডাইভার্ট করার ব্যবস্থা করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ।

এদিকে বুধবার রাতে বিমানের অপর একটি সূত্র  জানায়, সাময়িক বরখাস্তকৃতরা সবাই রাঙ্গা প্রভাতের দায়িত্বে থাকলেও ওই বিভাগের তদারকিতে অন্য কর্মকর্তারা ছিলেন। তাদের তদন্তের আওতায় আনা হয়নি। উপরন্তু রক্ষণাবেক্ষণ শাখার ডেপুটি চীফ হানিফকে আগেভাগেই দায়মুক্তির জন্য একটি তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, রাঙ্গা প্রভাতের ত্রুটির জন্য তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বা পরিবেশগত কারণ, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের অদক্ষতা উদাসীনতা ও স্যাবোটাজ। এর মধ্যে বিমানের নিজস্ব তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টে হিউম্যান ফেইলিওর ফ্যাক্টরকেই যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকি দুটোর ফাইন্ডিংস একই হয় না হয় ভিন্ন হয় সেটাই দেখার জন্য গোয়েন্দারা অপেক্ষায় রয়েছে।

একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গা প্রভাতের এফডিএম জব্দ করার পর বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। এসব তথ্য খতিয়ে দেখতে ওই ফ্লাইটে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা কর্মচারীর ব্যক্তিগত, পেশাগত, পারিবারিক ও শিক্ষাগত জীবনের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

একটি সূত্র জানায় তদন্ত প্রতিবেদনে রাঙ্গা প্রভাতের যান্ত্রিক ত্রুটির পরিণাম ভয়াবহ হতে পারত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির দরুন ওই সময় জরুরী অবতরণে বিলম্ব হলে ইঞ্জিনে আগুন ধরে যাবার আশঙ্কাও ছিল।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.