ছোট হয়ে গেল বিমানের আকাশ

biman    ছোট হয়ে আসছে বিমানের আকাশ। মোট ১৫টি উড়োজাহাজের মধ্যে এখন সচল আছে মাত্র ১২টি। ভাড়ায় আনা দুটি বোয়িং মাসের ১৫ দিন অচল থাকছে। বাকি ১০টি উড়োজাহাজ দিয়ে ১৫টি আন্তর্জাতিক ও ৭টি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে বিমান। এ অবস্থায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ফ্লাইট কাটছাঁট করতে হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়ছে যাত্রী। প্রতিটি সিডিউল ২/৩ ঘণ্টা বিলম্বে গন্তব্যের উদ্দেশে ছাড়ছে। এতে চরম আকার ধারণ করছে যাত্রী ভোগান্তি। তবে কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের দক্ষতার কারণে ঢাকায় লাগেজ হ্যান্ডলিংয়ের অব্যবস্থাপনার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।

মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় গত সেপ্টেম্বরে বিমান বহর থেকে বাদ দেয়া হয়েছে দুটি এয়ারবাস। এই দুটি উড়োজাহাজের আসন ছিল ২২০টি করে। বহর থেকে এয়ারবাস দুটি বাতিল করে দেয়ায় প্রতিদিনই ৪৪০ জন যাত্রী পরিবহনে বঞ্চিত হচ্ছে বিমান। এছাড়া চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় মঙ্গোলিয়া থেকে আনা একটি বোয়িং ৭৬৭ উড়োজাহাজও গত সপ্তাহে বহর থেকে বাদ পড়েছে। এর বাইরে মিসর থেকে লিজে আনা দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ এয়ারক্রাফটও মাসের ১৫ দিন বিকল থাকছে। নানা জটিলতায় এই উড়োজাহাজ দুটি এখন বিমানের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য মাত্র দুটি উড়োজাহাজ থাকায় প্রতিদিন ৭টি স্টেশনের ফ্লাইট সিডিউল ঠিক থাকছে না। গড়ে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা দেরি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই অবস্থায় ফ্লাইট ও যাত্রী কমে যাওয়ায় বিমানের আয়ের অংকেও ব্যাপক ধস নেমেছে। এ অবস্থায় আয় বাড়াতে ও রুটগুলো সচল রাখতে আবারও উড়োজাহাজ লিজ নেয়ায় আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে বিমান। কিন্তু নানা অনিয়ম-দুর্নীতি আর কমিশন বাণিজ্যের কারণে উড়োজাহাজ কোম্পানিগুলো বিমানের কাছে জাহাজ ভাড়া দিতে চাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে এয়ারবাস-৩১০ উড়োজাহাজে একের পর এক ত্রুটি দেখা দেয়ায় এগুলো বহরে রাখতে গিয়ে বড় অংকের লোকসান গুনতে হয় সরকারকে। ২০১২ সালে এয়ারবাস-৩১০-এর ডি-চেক করাতে গিয়ে বিমানকে ২১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত গচ্চা দিতে হয়। দুবাই বিমানবন্দরে একটি এয়ারবাসের ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে সেটি আর দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। সেখানেই ওই এয়ারবাসটি স্ক্র্যাপ করে বিক্রি করে দিতে হয়।
এয়ারবাস-৩১০ মডেলের দুটি উড়োজাহাজ অনেক পুরনো হওয়ায় এগুলোর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও অনেক বেশি। এছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের সামান্য ভুলেও পুরনো উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্র“টি থেকে যাওয়ার শংকা থাকে। যাতে যাত্রীসহ উড়োজাহাজের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিমান ম্যানেজমেন্ট উড়োজাহাজ দুটি বহর থেকে উঠিয়ে নিয়ে বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
জানা যায়, এয়ারবাস এ-৩১০-৩০০ উড়োজাহাজ দুটির এয়ারফ্রেম, আসন, অনবোর্ডের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিক্রির জন্য দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয় ১০ অক্টোবর। এ সময় আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩ নভেম্বরের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে উড়োজাহাজ দুটির ইঞ্জিন, এপিইউ ও ল্যান্ডিং গিয়ার বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় ৯ অক্টোবর। এক্ষেত্রেও আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩ নভেম্বরের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়ায় এয়ারবাস দুটি বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। বহর থেকে বাদ পড়ায় এখন ফ্লাইট কাটছাঁট করে সিডিউলও সাজানো হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি উড়োজাহাজকে গ্রাউন্ডেড করার পর বহরে নতুন দুটি বোয়িং উড়োজাহাজ শিগগিরই ভাড়া নেয়ার কাজ শুরু করেছে। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন পেলে আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে বিমান বহরে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের দুটি উড়োজাহাজ যুক্ত হবে বলে জানান বিমান বাংলাদেশের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ। তিনি বলেন, এটি পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া বিমান বহরে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে অত্যাধুনিক ৭৮৭ ড্রিম লাইনার মডেলের দুটি উড়োজাহাজ যুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে বর্তমানে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর মডেলের চারটি, বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর মডেলের দুটি, বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের চারটি, ড্যাস মডেলের দুটিসহ মোট ১২টি বিমান রয়েছে। এ ১২টি উড়োজাহাজ দিয়েই বিমান অভ্যন্তরীণ রুটে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, বরিশাল, সৈয়দপুর, যশোর এবং আন্তর্জাতিক রুটে লন্ডন, সৌদি আরব (৩টি), কুয়েত, কাতার, দুবাই, আবুধাবি, কুয়ালালামপুর, দাম্মাম, নেপাল, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, ইয়াঙ্গুন ও কলকাতায় ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.