এভিয়েশন নিউজ, ঢাকা : আড়াই মাস ধরে বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন অফিসের সহকারী স্টেশন ম্যানেজার মিজানুর রহমান (ট্রাফিক) হদিস নেই। লন্ডন এয়ারপোর্টের বিমান অফিসে তাকে দেখা যাচ্ছে না। বিমান বন্দরের অভ্যন্তরিন কোন কাজেও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু মাস শেষে তিনি বেতন নিচ্ছেন। বিষয়টি বিমানের ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়েরও কেউ জানে না। খোদ লন্ডস্থ কান্ট্রি মানেজার বিষয়টি গোপন করে রেখেছিলেন।
কিন্তু সহকারী স্টেশন ম্যানেজার না থাকায় লন্ডস্থ বিমান অফিসের কার্যক্রমে চরম ব্যাঘাত ঘটে। কাজের স্তুপ জমে যায়। যাত্রী সেবায় চরম অবনতি হতে থাকে। এই ঘটনায় যাত্রীরা একের পর এক অভিযোগ করলে বিমানের প্রধান কার্যালয়ের টনক নড়ে। এরপর সহকারী স্টেশন ম্যানেজার মিজানুর রহমানের খোজ শুরু হয়। পরে জানা যায় আরেক রহস্যজনক ঘটনা। তিনি নিখোজ নয়। লন্ডন বিমানবন্দরের সিকিউরিটি পাস ও বিমানের আইডি কার্ড না থাকায় তিনি বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারছিলেন না।
খোজ নিয়ে জানাগেছে গত ৭ জানুয়ারী বাংলাদেশ থেকে স্বপরিবারে লন্ডন যাওয়ার সময় তার লাগেজে বিপুল পরিমান অবৈধ সিগারেট ও শুল্কযোগ্য পন্য পাওয়া গিয়েছিল। এই ঘটনায় লন্ডনস্থ ইমিগ্রেশন পুলিশ তার লাগেজ থেকে সব সিগারেট জব্দ করে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু স্থানীয় কান্ট্রি ম্যানেজারসহ বিমানের লন্ডনস্থ বেশ ক‘জন ট্রাভেল এজেন্ট মিজানুর রহমানের পক্ষে তদবির করেন। এতে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো থেকে রক্ষা পেলেও ইমিগ্রেশন পুলিশ মিজানের সিকিউরিটি পাসসহ যাবতীয় আইডি কার্ড জব্দ করে তাকে লন্ডনে প্রবেশের অনুমতি দেয়। কিন্তু লন্ডন বিমান বন্দরে অবস্থিত বিমান অফিসে কাজের অনুমতি দেয়নি। এই ঘটনায় শুল্ক আইনে স্থানীয় থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়।
জানাগেছে গত ৭ জানুয়ারী এই ঘটনা ঘটার পর গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনি স্থানীয় বিমান অফিসে আসতে পারেননি। কিন্তু হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর ও মাস শেষে বেতন পেয়ে আসছিলেন। অভিযোগ লন্ডস্থ কান্ট্রি ম্যানেজার বিষয়টি বিমানের প্রধান কার্যালয়কে জানায়নি। তবে কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়ে ঘটনাটি গোপন রাখার পরামর্শ দেন কান্ট্রি ম্যানেজার ও সহকারী স্টেশন ম্যানেজা মিজানুর রহমান। এই ঘটনায় কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের ওই শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বড় ধরনের আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। একারণে গত আড়াই মাসেও বিষয়টি বিমানের প্রধান কার্যালয়ের কেউ জানতে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে বিমানের প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক প্রশাসন রাজপতি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রসঙ্গে কিছুই জানেন না বলে জানান। তবে বিভাগের অপর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ঘটনা জানাজানি হলে লন্ডনস্থ বিমান অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছেন মিজানের লাগেজে অবৈধ পন্য থাকায় লন্ডনের ইমিগ্রেশন পুলিশ তার কাছ থেকে বিমান বন্দরের সিকিউরিটি পাস ও বিমানের আইডি কার্ড জব্দ করায় এতদিন তিনি অফিসে প্রবেশ করতে পারেননি। আগামী ৭ এপ্রিল লন্ডনের একটি আদালতে তার এই মামলার শুনানী হওয়ার কথা রয়েছে।
অপর দিকে কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাংলাদেশ থেকে লন্ডন যাওয়ার পথে তার সঙ্গে তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়ের লাগেজ ছিল। বিমানের ইউনিফরম পরা অবস্থায় অন্য কারো লাগেজ বহন করা আইনত অপরাধ। একারণে তার সিকিউরিটি কার্ড জব্দ করে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। একারণে তিনি অফিস করতে পারেননি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে শিগগিরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হবে তাদের জরিমানাসহ বাংলাদেশে ফেরত আনা হবে। অভিযোগ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে এর আগেও অসংখ্য অভিযোগ আছে। বেশ ক‘বছর আগে হজ অপারশেণ চলাকালে বিমানের জেদ্দা অফিসে তার বিরুদ্ধে লাগেজ কেলেংকারীর অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় তাকে একবার চাকুরী থেকে সাময়িক বহিস্কারও করা হয়েছিল। কিন্ত মামলা করে তিনি চাকরী ফেরত পান। এরপর নানাভাবে চেষ্টা তদবির করে তিনি লন্ডন অফিসের সহকারি স্টেশন ম্যানেজার হিসাবে পোস্টিং নেন। অভিযোগ আছে এই পোস্টিংয়ের নেপথ্যেও বড় ধরনের আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং হয়েছিল বিমানের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সাবেক একজন এমডির সঙ্গে।