এগিয়ে হিলারি, পিছু হটছেন ট্রাম্প

60cc65e851de21bb5d45d8514fe508f8-6আরও একটা দিন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য আরও মন্দ খবর। ট্রাম্প ১৮ বছর ধরে হয়তো কোনো ফেডারেল আয়কর দেন না, সেই অভিযোগ সামাল দিতে না দিতে আরও আধা ডজন অভিযোগের মুখোমুখি হলেন এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো ট্রাম্প ফাউন্ডেশনের বেআইনিভাবে চাঁদা সংগ্রহের ঘটনা। ট্রাম্পের জন্য আরও মন্দ খবর এসেছে নতুন জনমত জরিপ থেকে। জরিপ বলছে, ট্রাম্পের চেয়ে বেশ এগিয়ে গেছেন তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ফাউন্ডেশন যথাযথভাবে নথিভুক্ত না হয়েই বেআইনিভাবে লাখ লাখ ডলার চাঁদা তুলছে, সে কথা প্রথম জানা যায় ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে। গত সোমবার নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লিখিত নির্দেশে ট্রাম্প ফাউন্ডেশনকে নিউইয়র্কে সব ধরনের চাঁদা সংগ্রহের চেষ্টা বন্ধ করতে বলেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই রাজ্যে নথিবদ্ধ হতে প্রয়োজনীয় সব আইনি কাগজপত্র দাখিল করতে ফাউন্ডেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এই নির্দেশ ট্রাম্পের জন্য দুঃসংবাদ এ কারণে, এ পর্যন্ত তিনি ফাউন্ডেশনের কাজের ব্যাপারে কোনো হিসাব দাখিল করেননি। এখন তাঁকে সেসব কাগজও দাখিল করতে হবে। উল্লেখ্য, ফ্লোরিডার অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডির নির্বাচনী তহবিলে ২৫ হাজার ডলারের চাঁদা দিয়েছে ট্রাম্প ফাউন্ডেশন, যদিও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ রকম চাঁদা দেওয়া বেআইনি। সন্দেহ করা হচ্ছে, ট্রাম্পের বিতর্কিত ট্রাম্প ইউনিভার্সিটির ব্যাপারে কোনো তদন্তে ফ্লোরিডা যাতে অংশ না নেয়, সে উদ্দেশ্যেই এই চাঁদা দেওয়া হয়। বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও ট্রাম্প নিজের ব্যক্তিগত বিভিন্ন খরচ মেটাতে ফাউন্ডেশনের তহবিল ব্যবহার করেছেন, এমন অভিযোগও উঠেছে। এখন সেসবের যাবতীয় নথিপত্র পরীক্ষার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে তুলে দিতে হবে।
ট্রাম্প আইন ভেঙেছেন, এমন আরও দুটি অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সাময়িকী নিউজউইক জানিয়েছে, কিউবার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ট্রাম্প এই দেশটির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। অন্যদিকে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস জানিয়েছে, নারীবিষয়ক বৈষম্যবিরোধী আইন থাকলেও ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন গলফ মাঠগুলোর অনেক নারী কর্মীকে ‘যথেষ্ট সুন্দরী নয়’ অজুহাতে চাকরিচ্যুত করেছেন। এ নিয়ে এখনো কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে সেই সম্ভাবনা একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ঝামেলার শেষ এখানেই নয়। আয়কর ও নারীদের ব্যাপারে বিতর্কিত মন্তব্য করে ট্রাম্প ইতিমধ্যে চতুর্দিক থেকে আক্রান্ত হচ্ছিলেন। গত সোমবার যুদ্ধ-ফেরত সেনাসদস্যদের ব্যাপারে মন্তব্য করে আরেক ঝামেলায় জড়িয়ে গেলেন তিনি। ভার্জিনিয়ায় এক নির্বাচনী সভায় ট্রাম্প মন্তব্য করেন, যুদ্ধ-ফেরত সেনাসদস্যের অনেকেই যুদ্ধোত্তর মানসিক চাপজনিত অসুখে ভুগে থাকেন, কারণ যুদ্ধের ভয়াবহতা সহ্য করার ক্ষমতা অনেকের নেই। সেনাসদস্যের অনেকেই ট্রাম্পের এই মন্তব্য অপমানজনক বলে তীব্র সমালোচনা করেছে। অনেক সেনাসদস্য টুইটারে ও অন্যান্য মাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, ট্রাম্প নিজে চারবার সেনাবাহিনীতে অংশগ্রহণের ডাক পেয়েও নানা ছলছুতায় তা এড়িয়ে গেছেন। ফলে আর যাই হোক, যুদ্ধ-ফেরত সেনাদের দুর্বল বলে ঠাট্টা করা তাঁর সাজে না। ইরাক-ফেরত এক সেনাসদস্য মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্প একটা আস্ত গর্দভ। হিলারি ক্লিনটনও এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্পের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন।
এসব বিতর্কের কারণে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা পড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহের প্রথম টিভি বিতর্কে তিনি মোটেই ভালো করেননি। অধিকাংশ জনমত জরিপে সে কথা প্রমাণিত হলেও জাতীয় পর্যায়ে জনসমর্থনে এর প্রভাব পড়েছে কি না, সে প্রশ্নে বিশেষজ্ঞেরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন। কিন্তু গত সোমবার একাধিক জনমত জরিপের প্রায় প্রতিটিতে ট্রাম্প পিছিয়ে পড়ছেন এমন ইঙ্গিত মিলেছে। সম্ভাব্য ভোটদাতাদের মধ্যে সিএনএন-ওআরসির এক জাতীয় জরিপ অনুসারে হিলারির পক্ষে ৪৭ শতাংশ জনসমর্থন রয়েছে, অন্যদিকে ট্রাম্পের সমর্থনের পরিমাণ ৪২ শতাংশ। এ ছাড়া লিবার্টারিয়ান পার্টির গ্যারি জনসন ৭% ও গ্রিন পার্টির জিল স্টাইন ২% সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এখনো টিকে রয়েছেন। তবে তাঁদের সমর্থন ক্রমশই কমতির দিকে।
রাজ্য পর্যায়ের জরিপেও ট্রাম্পের জন্য মন্দ খবর এসেছে। জনসমর্থনের দিক দিয়ে রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট কোনো দলই সরাসরি এগিয়ে না থাকায় মোট ১১টি রাজ্যকে ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল হয়তো এই ১১টি রাজ্যই নির্ধারণ করবে। কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ জরিপ অনুসারে ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলাইনা ও পেনসিলভানিয়ায় হিলারি যথাক্রমে ৫, ৩ ও ৪ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। তবে ওহাইওতে ট্রাম্প হিলারির তুলনায় ৫ পয়েন্ট এগিয়ে। এই সপ্তাহে এটিই তাঁর জন্য একমাত্র সুখবর।
ট্রাম্প চাপের মুখে রয়েছেন—এ কথা ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকেরাও স্বীকার করেছেন। তবে তাঁরা আশা করছেন, ভাইস-প্রেসিডেন্ট বিতর্কে গভর্নর মাইক পেন্স হিলারির রানিং মেট সিনেটর টিম কেইনকে ধরাশায়ী করে অবস্থা পরিবর্তনে সাহায্য করবেন। আগামী রোববার হিলারির সঙ্গে যে দ্বিতীয় বিতর্ক নির্ধারিত আছে, সেখানেও হিলারিকে পর্যুদস্ত করার সুযোগ পাবেন তিনি। তবে এই উভয় বিতর্কের ফলাফল সম্পূর্ণ উল্টো হতে পারে, সে কথাও ট্রাম্প শিবিরকে মাথায় রাখতে হচ্ছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.