প্রবাসী আয় কমেছে ১৮ শতাংশ

remittance-sm20161004021727চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) হিসাবে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ কমেছে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স)। এ তিন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২৩ কোটি ২১ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ শতাংশ অর্থাৎ ৭০ কোটি ১৫ লাখ ডলার কম। গত অর্থবছরের এই তিন মাসে প্রবাসী আয় হয়েছিল ৩৯৩ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা ১০৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা গেল অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে ৩০ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ২২ দশমিক ৬৮ শতাংশ কম। গেল অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৩৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স আসে ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। যা আগের বছরের আগস্ট মাসে ছিল ১১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি জুলাইতে ছিল আরও করুণ। চলতি অর্থবছরের মাসটিতে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। অথচ গেল অর্থবছরের একই মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৩৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলার।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জনশক্তি রফতানিতে ভাটা, অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন মুদ্রার দরপতন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলা রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার কারণে রেমিট্যান্সে এ ধাক্কা লেগেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৭১ কোটি ২১ লাখ ডলার। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩০ কোটি ৮৯ লাখ, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১ কোটি ১০ লাখ এবং বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৯ লাখ ডলার।

তবে একক ব্যাংক হিসেবে সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে ২৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্স গ্রহণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ১১ কোটি ৩৯ লাখ ডলার।

এছাড়া সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার, জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ কোটি ৩১ লাখ ডলার, ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার, ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৬৭ লাখ ডলার এবং পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের (২০১৪-১৫) তুলনায় প্রায় আড়াই শতাংশ কম রেমিট্যান্স আসে। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে যা ছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কয়েকটি কারণে রেমিট্যান্স কমছে। এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হওয়া, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কারণ। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানিতেও একরকমের ‘স্থবিরতা’ চলছে। সরকার নানা দেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও এর দৃশ্যমান কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না বলে রেমিট্যান্সের গতিতে এই ছাপ।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.