পরের বিতর্কে ট্রাম্প আসছেন তো?

0cd5623c8f95a1dd41449c410ff769c4-c_03.যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, প্রথম বিতর্কে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর মাইক্রোফোন নিয়ে ঝামেলা করেছিল। ঠিক কী ঝামেলা, তা অবশ্য তিনি উল্লেখ করেননি। তবে এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার নির্দলীয় ডিবেট কমিশন স্বীকার করেছে, ট্রাম্প ঠিক কথাই বলেছেন। বিতর্ক কক্ষে শ্রোতাদের জন্য ট্রাম্পের মাইক্রোফোনে ধ্বনির মাত্রা পর্যাপ্ত ছিল না।
|এখন সন্দেহ করা হচ্ছে, ‘গোপন চক্রান্তের’ অভিযোগ তুলে ট্রাম্প হয়তো দ্বিতীয় বিতর্কে না-ও অংশ নিতে পারেন। গত শুক্রবার নিউইয়র্ক টাইমস-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, বিতর্কের অর্ধেক সময় তাঁকে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয় মাইক্রোফোনের সমস্যা নিয়ে। বিতর্কের হলঘর থেকে তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া তাঁকে ‘শুনতে পাচ্ছেন না’ বলে বারবার হাত নেড়ে জানাচ্ছিলেন, এর ফলে তাঁর মনোযোগ বিঘ্নিত হয়। বিতর্কে যাওয়ার আগে মাইক্রোফোন সমস্যার সমাধান করতে হবে, তিনি জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের এই কথাকে কেউ কেউ বিতর্কে অংশ না নেওয়ার প্রথম প্রকাশ্য ইঙ্গিত বলে ব্যাখ্যা করেছেন। ট্রাম্পের দুই প্রধান উপদেষ্টা, সাবেক স্পিকার নিউট গিংরিচ ও নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডি জুলিয়ানি তাঁকে পরে দুই বিতর্কে অংশ না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ অবশ্য মাইক্রোফোন নিয়ে নয়, সঞ্চালকের পক্ষপাত নিয়ে।
ট্রাম্প যদি বিতর্কে সত্যি অংশ না নেন, এর কারণ অবশ্য উপদেষ্টাদের পরামর্শ নয়, প্রথম বিতর্কে তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের কাছে সরাসরি ধরাশায়ী হয়েছিলেন, সে কারণে। ট্রাম্প মুখে বলে বেড়াচ্ছেন, তিনিই বিতর্কে জিতেছেন। কিন্তু প্রতিটি নিরপেক্ষ জনমত জরিপ অনুসারে কমপক্ষে ২০ পয়েন্টে তিনি পরাস্ত হয়েছেন।

বিতর্কে ট্রাম্পের দৃষ্টিগ্রাহ্য প্রস্তুতির অভাব তাঁর জনসমর্থনেও প্রভাব ফেলেছে। শুক্রবার নতুন যে জাতীয় জরিপ বেরিয়েছে, তার প্রতিটিতে ট্রাম্পের তুলনায় ২ থেকে ৭ পয়েন্টে এগিয়ে হিলারি। এমনকি ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ফক্স নিউজ টিভির গৃহীত জরিপেও ট্রাম্পের তুলনায় ৩ পয়েন্টে এগিয়ে হিলারি। ‘ব্যাটেল গ্রাউন্ড স্টেটস’ হিসেবে পরিচিত মিশিগান, ফ্লোরিডা ও নিউ হ্যাম্পশায়ারে হিলারি ৩ থেকে ৭ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন।

ট্রাম্পের পরামর্শদাতারা আশা করছেন, পরবর্তী বিতর্কে ট্রাম্প শুধু অংশই নেবেন না, হিলারিকে রীতিমতো পর্যুদস্ত করবেন। এই বিতর্কে হিলারির ই-মেইল সমস্যা থেকে লিবিয়ায় সামরিক অভিযান ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশন নিয়ে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন প্রশ্ন তিনি তুলবেন।

শুক্রবার নিউইয়র্ক টাইমস-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, হিলারি ও বিল ক্লিনটনের বিবাহসংকট নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলবেন। এই বিতর্কের জন্য বিশেষ কোনো প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। পত্রিকাটি জানিয়েছে, ট্রাম্প যাতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেন, সে জন্য তাঁর উপদেষ্টারা চেষ্টার কসুর করছেন না। কিন্তু স্কুলের বেয়াড়া ছাত্রের মতো শিক্ষকের কোনো কথাই তাঁর কানে ঢুকছে না। মঞ্চের সামনে মাইক্রোফোন নিয়ে ‘মক ডিবেট’ করতে তিনি অস্বীকার করেছেন। এদিকে নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমন সব বিষয়ে কথা না বলে সাবেক মিস ইউনিভার্স এলিসিয়া মাচাদোকে নিয়ে অকারণ বিতর্কে জড়িয়ে পড়াতেও ট্রাম্পের উপদেষ্টারা অসন্তুষ্ট। শুক্রবার রাত তিনটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত মাচাদো বিষয়ে একের পর এক টুইটার বার্তা পাঠান ট্রাম্প। এতে তিনি মাচাদোকে কেবল অসৎ বলেই থেমে যাননি, তাঁর একটি ‘সেক্স টেপ’ আছে, সেটা উদ্ধারেরও পরামর্শ দিয়েছেন।

ট্রাম্পের এই অস্বাভাবিক ব্যবহার রাজনৈতিক মহলে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। হিলারিকে আক্রমণ করার বদলে তিনি আক্রমণ করছেন একজন হিস্পানিক নারীকে। হিস্পানিক ও নারী—এই দুই শ্রেণির মানুষের কাছে ট্রাম্পের ব্যাপারে প্রবল বিরোধিতা রয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, যে লোক দুদিন পর দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, তাঁর কি এই রকম বালকসুলভ ব্যবহার করা সাজে?

গত শুক্রবার ফ্লোরিডার ক্লোরাল স্প্রিংসে এক জনসভায় হিলারি সে কথা তুলে ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘সাবেক মিস ইউনিভার্সের সঙ্গে টুইটারে ঝগড়া করার জন্য রাত তিনটায় না ঘুমিয়ে কে জেগে থাকে?’ তাঁর সে প্রশ্নের জবাবে সামনের সারিতে বসা এক দর্শক তাৎক্ষণিক উত্তর দেন, ‘শুধু একজন গর্দভ’।

পরবর্তী বিতর্কে ট্রাম্পের অংশগ্রহণ নিয়ে নানা কথা চালাচালি হলেও অধিকাংশ পর্যবেক্ষক একমত, এমন ভুল ট্রাম্প করবেন না। বিতর্কে না আসার অর্থ দাঁড়াবে তিনি ভয় পেয়েছেন। আর এর ফল হবে ভয়াবহ। কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে ট্রাম্প যদি নিজেকে সামান্য পরিমাণে হলেও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন, দ্বিতীয় বিতর্কে তাঁর ভালো করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে কেউ কেউ আশা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন বিস্তর উদাহরণ রয়েছে যে প্রথম বিতর্কে ধরাশায়ী হওয়া সত্ত্বেও পরবর্তী বিতর্কে চমৎকার ফল মিলেছে। রোনাল্ড রিগান ১৯৮৪ সালে জিমি কার্টারের সঙ্গে প্রথম বিতর্কে খুবই বাজেভাবে হেরেছিলেন। কিন্তু পরের বিতর্কে রিগান শুধু ভালো ফলই দেখাননি, সে বছরের নির্বাচনে কার্টারকে অভাবিত ব্যবধানে পরাস্ত করেছিলেন। ২০১২ সালে মিট রমনির বিরুদ্ধে প্রথম বিতর্কে বারাক ওবামা ছিলেন নিস্তেজ, প্রায় উদ্দেশ্যবিহীন। বলাই বাহুল্য, সে বছর শুধু পরবর্তী বিতর্কে নয়, নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ওবামা।

ট্রাম্পের শিবির আশা করছে, তাঁদের প্রার্থী তেমন ফল দেখিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবেন। তবে তেমন সম্ভাবনায় সবাই যে আশাবাদী, এমন কথা বলা সম্ভবত অত্যুক্তি হবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.