শ্রীলঙ্কায় পর্যটনশিল্পে বড় ধরনের ধাক্কা

শ্রীলঙ্কায় পর্যটনশিল্পে বড় ধরনের ধাক্কা।

শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডেতে গির্জা ও অভিজাত হোটেলে হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ ২৫৩ জনকে হত্যা করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়। ওই ঘটনার পর পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় শ্রীলঙ্কার ৪৪০ কোটি ডলারের পর্যটন খাতে বিরাট ধাক্কা লেগেছে।
আরও হামলা হতে পারে, এমন শঙ্কায় বিশ্বের বিভিন্ন অংশের পর্যটকরা হোটেল ও ফ্লাইট বুকিং বাতিল করায় শ্রীলঙ্কার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মীরা বিপাকে পড়েছেন। দেশটির জিডিপির পাঁচ শতাংশ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল বলে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এ বিষয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা বলেন, পর্যটন খাতের পাশাপাশি অর্থনীতির জন্যও এটা বড় ধরনের ধাক্কা। অর্থনীতির সমৃদ্ধির জন্যই হামলার আগে পর্যটন যেখানে ছিল সেখানে ফিরিয়ে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভ্রমণবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফরোয়ার্ডকিসের তথ্য দিয়ে রয়টার্স বলছে, বোমা হামলার পরের সপ্তাহগুলোতে শ্রীলঙ্কায় হোটেল বুকিংয়ের পরিমাণ গড়ে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮৬ শতাংশ কমেছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই হামলার পর শ্রীলঙ্কায় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেখান থেকে উত্তরণে নিরাপত্তা জোরদার ও দৃঢ় নীতি নিতে হবে।
এদিকে গত শনিবার পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাজুড়ে হোটেলগুলোর বুকিং বাতিলের হার গড়ে ৭০ শতাংশ; এর মধ্যে রাজধানী কলম্বোর হোটেলগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার পর্যটন ব্যুরোর চেয়ারম্যান কিশু গোমেজ। তিনি বলেন, কিছু এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের হারও কমে গেছে; সাধারণত যা হয়, তার তুলনায় অনেক কমে গেছে লোড ফ্যাক্টরের পরিমাণও। নিশ্চয়ই এটি চিন্তিত হওয়ার মতো বিষয়। গত বছরও পর্যটন খাত ছিল শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তৃতীয় সর্বোচ্চ ও সবচেয়ে বর্ধনশীল উৎস।
হামলার পরের পরিস্থিতি অভিজাত হোটেল ও সৈকতের ওপর নির্ভরশীল ব্যবসায়ীদের ভয়াবহ ক্ষতির মুখে দাঁড় করিয়েছে। দক্ষিণ কলম্বোর বেনতোতা সমুদ্র সৈকতের প্রায় সব রিসোর্টই খালি পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন সেগুলোর ব্যবস্থাপকরা।
তলোয়ার ছুরি জমা দিতে নির্দেশ : ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর শ্রীলঙ্কায় নাগরিকদের হাতে থাকা সব তলোয়ার এবং বড় আকারের ছুরি জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। নতুন করে সন্ত্রাসী হামলার সতর্কতার মধ্যে গতকাল রোববারের মধ্যেই সব ধারালো অস্ত্র নিকটস্থ থানায় জমা দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশের মুখপাত্র রাবন গুনাসেকারার বরাত দিয়ে নিউজ ফার্স্ট ডট লংকা জানিয়েছে, তবে দৈনন্দিন গৃহস্থালির কাছে ব্যবহৃত ছুরি বা যেসব ধারালো অস্ত্র রাখতে লাইসেন্স প্রয়োজন হয় না, সেগুলো জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না বলে জানিয়েছে।
রাবন গুনাসেকারা জানান, ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি কারও কাছে পুলিশ বা সামরিক বাহিনীর পোশাকের মতো দেখতে কোনো ক্যামোফ্লাজড পোশাক থেকে থাকলে তাও জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে লাইসেন্সবিহীন ধারালো অস্ত্র বা সামরিক পোশাক জমা দিলে দায়মুক্তি দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেনি শ্রীলঙ্কার পুলিশ।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা শনিবার রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইস্টার সানডের হামলায় সম্পৃক্ততা ছিল এরকম ২৫-৩০ জন এখনো পলাতক বলে তাদের ধারণা। যারা ওই ঘটনায় জড়িত ছিল তাদের সবাইকেই আমরা চিহ্নিত করেছি। এখন কাজ হলো তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা।
সিরিসেনা জানিয়েছেন, মোট আটটি দেশের গোয়েন্দারা ওই হামলার তদন্তে শ্রীলঙ্কাকে সহায়তা করছে। এ বছরের শেষদিকে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা বাহিনী দেশ থেকে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গত ২১ এপ্রিল কলম্বোসহ তিন শহরের তিনটি গির্জা ও চারটি পাঁচতারা হোটেলে আত্মঘাতী বোমা হামলায় আড়াইশর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ইস্টার সানডের ভয়াবহ হামলার পর শ্রীলঙ্কাজুড়ে জারি করা জরুরি অবস্থার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এ পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে নাগরিকদের কাছ থেকে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি দল আইএস ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে। আর শ্রীলঙ্কা সরকারের ধারণা, স্থানীয় দুটি জঙ্গি দল কোনো বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের সহযোগিতায় ওই হামলা চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে সতর্ক করে বলেছে, আরও সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি রয়েছে শ্রীলঙ্কার সামনে। জঙ্গিরা নিরাপত্তা বাহিনীর ছদ্মবেশে নতুন হামলার পরিকল্পনা করছে বলেও গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.