ফ্লাইট চালুর গুঞ্জনেই ইউনাইটেডের বছর পার

united-change20161217215746দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেডের ফ্লাইট চলাচল। বছরজুড়ে ফ্লাইট চালুর আশ্বাস ও গুঞ্জন ছিল বেশ; তবে আকাশে উড্ডয়নের সৌভাগ্য হয়নি ইউনাইটেডের বিমানগুলোর।

এ কারণে কোম্পানিটির শেয়ারদর ফেসভ্যালুর অনেক নিচে নেমে গেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা দিন দিন ভারি হচ্ছে। আর ফ্লাইট চলাচল শুরু না করলে কোম্পানির শেয়ারদর আগের মতো চাঙ্গা হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চলতি বছরের ৫ মার্চ থেকে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সব ফ্লাইট বন্ধ। ফ্লাইট বন্ধ থাকার খবর প্রকাশের পর থেকেই শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতন হচ্ছে ইউনাইটেডের। লোকসান গুনছেন বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিটির লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বছরের শুরুতে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৭ টাকা ৩০ পয়সা। ফ্লাইট বন্ধের খবরে তা নেমে আসে ৪ টাকা ৩০ পয়সায়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শেয়ারের দর ছিল ৫ টাকা, যা ফেসভ্যালুর অর্ধেক।

তবে ফ্লাইট বন্ধের পর থেকেই গুঞ্জন ছিল এ বছরের শেষ দিকে কয়েকটি বিমান কিনে ফ্লাইট চালু করবে ইউনাইটেড। তবে এই গুঞ্জনে বছর পার হলেও ফ্লাইট চালু দূরের কথা, বিমানও কিনতে পারেনি তারা। বরং ঋণ খেলাপির দায়ে ইউনাইটেডের বিমানসহ অন্যান্য সম্পদ নিলামে তোলার ঘোষণা দেয় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

ব্যাংকটি জানায়, ২৭ নভেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারের কাছে পাওয়া ৩৩ কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার ২১৩ টাকা। এ টাকা পরিশোধে কোম্পানিটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাই কোম্পানির ৩টি বিমান, ২টি মিনিবাস নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে বর্তমানে এ বিষয়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মোট ঋণ আছে ২৯৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ১১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ১৭৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

কোম্পানিটির ফ্লাইট কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। ফলে শেয়ার লেনদেনের সময় মার্জিন ঋণও পাবেন না বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে ফ্লাইট বন্ধ থাকলেও গত ১ জুন কোম্পানিটিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি প্লেসমেন্ট ও বন্ড ইস্যু করে ৬২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে ৪০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা সংগ্রহ করবে কোম্পানিটি। বাকি ২২৪ কোটি টাকা বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সংগ্রহ করবে।

প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে প্রাপ্য শেয়ার সুইফট এয়ার কার্গো পিটিই লিমিটেডের ক্ষেত্রে তিন বছর লক ইন (বিক্রি বা হস্তান্তর নিষেধাজ্ঞা), ফনিক্স এয়ারক্রাফট লিজিং পিটিই লিমিটেড এবং টিএসি এভিয়েশনের কাছে এক বছর করে লক ইন থাকার কথা উল্লেখ করে কমিশন। উত্তোলিত অর্থ দিয়ে বিমান ক্রয় এবং এ সংক্রান্ত বর্তমান দায় পরিশোধের কাজে ব্যয় করবে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে ৫ জুন লক ইন ইস্যুতে বিএসইসির কাছে আবেদন করা হয়েছে।বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সুযোগ চায় বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউনাইটেড এয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ধরনের তালবাহানা শুরু করেছে। তারা বিনিয়োগকারীদের অর্থ হাতিয়ে নিলেও নানা কৌশলে শেয়ারের দর প্রভাবিত করে উচ্চ দরে কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। এভাবে তারা উচ্চ মুনাফাসহ তাদের বিনিয়োগ তুলে নেয়।

পুঁজিবাজারে শেয়ারের দর চাঙ্গা করতে ইউনাইটেডের ফ্লাইট চালু অতি জরুরি। কবে চালু হচ্ছে ইউনাইটেডের ফ্লাইট এ বিষয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী বলেন, অর্থ সংকটের কারণে সব ফ্লাইট ও কার্যক্রম বন্ধ।বর্তমানে এ সমস্যা অনেকটা কেটে গেছে। আমরা নতুন ১০টি বিমান আনতে চাচ্ছি। ইতোমধ্যে ৫টি বিমান পরিদর্শন ও বিমান উড্ডয়নের অনুমতি চেয়ে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) চিঠি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে উড্ডয়নের সব প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করা হয়েছে। বেবিচক অনুমতি দিলেই ফ্লাইট চালু করবো। সব ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে উড়বে ইউনাইটেড এয়ারের বিমান।

২০১০ সালে পুঁজিবাজারে এক কোটি শেয়ার ছেড়ে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। তালিকাভুক্তির পরের বছর ২০১১ সালে কোম্পানিটি রাইট শেয়ার ইস্যু করে পুনরায় বাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে। ওই বছর প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের একটি রাইট শেয়ার ইস্যু করা হয়। ১০ টাকা ফেসভ্যালুর সঙ্গে ৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ টাকা। তখন কোম্পানিটি ২১ কোটি রাইট শেয়ার ইস্যু করে ৩১৫ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করে। অথচ তালিকাভুক্তির পর থেকে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের ক্যাশ লভ্যাংশ প্রদান করেনি প্রতিষ্ঠানটি। সব সময়ই ইউনাইটেড এয়ার বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়ে আসছে।

৩১ অক্টোবর ২০১৬ সালে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে পরিচালকদের কাছে রয়েছে মাত্র ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১৭ দশমিক ৪৩ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ শেয়ার।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.