নারীরাই ওড়ালেন নারী দিবসের বিশেষ ফ্লাইট

biman123নারী দিবসে আকাশে উড়লো বিমানের বিশেষ ফ্লাইট। বুধবার (৮ মার্চ) দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে ৮০ জন যাত্রী নিয়ে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে উড়ে যায়। বিজি-৬০৩ বিশেষ ফ্লাইটটিতে পাইলট হিসেবে রয়েছেন ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজা ও ফার্স্ট অফিসার সারওয়াত সিরাজ অন্তরা। রয়েছেন আরো ৬ জন ক্রু। এছাড়া এই ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং, লাগেজ হ্যান্ডেলিং, বোডিং পাস ইস্যু, হুইল চেয়ার পরিচালণা, যাত্রীদের অভ্যর্থনা ও স্বাগত জানানো সবই করেছে বিমানের নারী কর্মীরা। ফ্লাইট উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিও আয়োজন করেছেন বিমানের জনসংযোগ শাখার ৩ নারী কর্মকর্তা তাসনিম, শারমীন আর তানিয়া।

৮ মার্চ নারী দিবস হওয়ায় ৮ সংখ্যাটিকে প্রতীকী ধরেই ৮ নারীর হাতে ওই ফ্লাইট ওড়ায় বিমান কর্তৃপক্ষ। বেলা ৩টায় ফ্লাইটটি সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ফিরতি পথ ধরে।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, বিশ্বের সর্বক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। বিমানের এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে নারী কর্মী নেই। তারা ত‍াদের দক্ষতার প্রমাণ রাখছেন। তাদের সাফল্যে আমরা আনন্দিত। তাই এ ধরনের একটি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করছি।

বিমানের পক্ষে বলা হয়, এভিয়েশন খাতে নারীদের আরো আগ্রহী এবং বিশ্বের অন্যান্য এয়ারলাইন্সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণাদানে এই উদ্যোগ। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এই এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই পুরুষ কর্মীদের পাশাপাশি নারী কর্মীদের দিয়েও ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে। এয়ারক্রাফট মেইনটেনেন্স, সিডিউলিং ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এর বিভিন্ন শাখায়ও সফলতা আর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে আসছে নারীরা।

প্রকৃতপক্ষে, বিমানের নারী পাইলটরা যে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে, দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে এবং নির্ভয়ে এভিয়েশন জগতের সাথে তাল মিলিয়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে সে বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিতেই এই বিশেষ উদ্যোগ।

এ সময় বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ, পরিচালক কাস্টমার সার্ভিস আতিক সোবহান, পরিচালক প্রশাসন মোহাম্মদ মমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ বিমানে ফ্লাইট পরিচালনাসহ, গ্রাউন্ডসার্ভিস, প্রকৌশল এবং বিভিন্ন বিভাগে নারী কর্মীরা দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। দেশের নারীরা বিশ্বের সংগে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে, এটি তুলে ধরতেই নারী দিবসে এই বিশেষ ফ্লাইট’। তিনি আজকের এই বিশেষ দিনে বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা নারী সহকর্মীদের অভিনন্দন জানান। ২০৩০ সালের মধ্যে বিমানে ৫০শতাংশ নারী কর্মী নিয়োগের কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
শুধু নারী দিবস বলেন, বছরের অন্যান্য কর্ম দিবসেও বিমানে নারী কর্মীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সরকার নারীদের ক্ষমতায়নে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিমান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পুরুষ কর্মীদের পাশাপাশি নারীরাও সমান তালে দক্ষতার সংগে কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মহাব্যবস্থাপক জনসংযোগ শাকিল মেরাজ বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নারীদের সুষ্ঠু, সুন্দর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের নারীরাও এভিয়েশন খাতে সফল, এ বিষয়টি আমরা তুলে ধরতে চাই। একই সঙ্গে সারা দেশের নারীদের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চাই, আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখলে সেটি সফল হওয়া সম্ভব’।
ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজা বিমানে যোগ দিয়েছেন ২০০০ সালে। তিনি এফ-২৮, ডিসি ১০-৩০ এবং এয়ারবাস-এ ৩১০ উড়োজাহাজ চালিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করছেন। এখন পর্যন্ত ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজা ৬ হাজার ঘন্টা উড়োজাহাজ চালানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
আজকের এই বিশেষ ফ্লাইটের উদ্দেশ্য বিশ্বকে দেখানো বাংলাদেশের নারীরা এভিয়েশন খাতে সফলভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। তাদের অবদান বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের ইতিহাসে স্বরণীয় হয়ে থাকবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.