গ্যাসের দাম ২ বছরেও না বাড়াতে পোশাক শিল্প মালিকদের দাবি

গ্যাসের দাম ২ বছরেও না বাড়াতে পোশাক শিল্প মালিকদের দাবি।

পোশাক শিল্পের ‘কঠিন’ পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্তত দুই বছর গ্যাসের দাম না বাড়াতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে এই খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সংগঠন তিনটি।
দাম বাড়ানোর আগে গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কটের কারণে শিল্পখাত যে লোকসানের মুখে পড়েছে, তার ক্ষতিপূরণও চেয়েছে তারা।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর তোড়জোড়ের মধ্যে বুধবার বিজিএমইএ ভবনে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে বিজিএমইএ, বিটিএমএ ও বিকেএমইএ।

বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বিকেএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনসুর আহমেদ এতে বক্তব্য রাখেন।

সিদ্দিকুর বলেন, গনশুনানিতে শিল্পে গ্যাসের মূল্য বর্তমানে প্রতি ঘনফুট ৭ দশমিক ৭৬ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৮ দশমিক ৪ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবনা অনুয়ায়ী গ্যাসের মুল্য বৃদ্ধি পারে ১৩২ শতাংশ। এতে শিল্পে উৎপাদান খরচ বৃদ্ধি পাবে প্রায় পাঁচ শতাংশ।

“আমরা মনে করি, এই প্রস্তাবনা শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও বিকাশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই মূল্যবৃদ্ধি বস্ত্র ও পোশাকখাতের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।”

শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ার কারণে পোশাক শিল্পে উৎপাদন খরচ এরই মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে বলে দাবি করেন বিজিএমইএ সভাপতি।

তিনি আরও বলেন, এর উপর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে পোশাকের দরপতন হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ইউরোপে দরপতন হয়েছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

“তাই আমরা চাই, অন্তত দুই বছর শিল্পে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি যেন না হয়। এমনিতেই শ্রমিকদের বেতন আমরা বাড়িয়েছি। সেটাই এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি।”

২০১৮ সালে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর সময় গ্যস-বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন বলেও জানান সিদ্দিকুর।

তিনি বলেন, “এরপরও আমরা শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছি না। গ্যাস পেলেও আবার অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিত সরবরাহ পাচ্ছি। আবার যতটুকু গ্যাস ব্যবহার করছি, তার চেয়েও বেশি বিল পরিশোধ করছি। গ্যাস ব্যবহার না করেও তিতাস গ্যাস কোম্পানিকে বাতাসের মূল্য দিচ্ছি।”

এক প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিকুর বলেন, “গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে বিগত দিনে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় যে লোকসান হয়েছে, তিতাসকে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”

ব্যবহার অনুযায়ী গ্যাসের বিল পরিশোধে ইভিসি মিটার চালুর দাবিও জানান বিজিএমইএ সভাপতি।

তিনি বলেন, “মোট উৎপাদিত গ্যাসের ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ সরবরাহ হয় শিল্পখাতে। এটা খুবই নগন্য। সরকারের কাছে অনুরোধ, এমন কোনো পদক্ষেপ নেবেন না, যাতে শিল্পের বিকাশ রুদ্ধ হয়, শ্রমিক কর্মসংস্থান হারায়, অর্থনীতি গতিহীন হয়ে পড়ে।

“আমাদের ৬ হাজার মেম্বার আছে, তার মধ্যে তিন হাজার মেম্বারের ফ্যাক্টরি দিনে দিনে বন্ধ হয়ে গেছে। একটা উদ্যোক্তা হতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু তার গলা টিপে হত্যা করছি এই জিনিসটা করা উচিৎ নয়।”

বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, প্রতি ১০ বছরের জন্য একটি শিল্প নীতি করা প্রয়োজন। কোন জিনিসের কেমন দাম বাড়ানো হবে, সেটা এ নীতিতে থাকবে। তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোও সে অনুয়ায়ী পরিকল্পনা সাজাতে পারবে।

তিনি বলেন, “বরাদ্দ অনুযায়ী গ্যাস সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো সরবরাহ করতে পারছে না। ইন্ডাস্টিতে যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে, তাও ক্লিন নয়। এর প্রভাবে শিল্পের যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এর ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না।”

বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, “পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।”

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.