উড়োজাহাজে আসছে ইয়াবা- ৬ মাসে গ্রেফতার ৪০

গত ৩১ জানুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সন্দেহভাজন যাত্রী রইছ মিয়াকে আটক করা হয়। বিমানবন্দরে এক্স-রে মেশিন না থাকায় হাসপাতালে নিয়ে তার পেটে করা হয় এক্স-রে। রিপোর্টে পেটে ইয়াবা থাকার প্রমাণ পাওয়ার পর ওই যাত্রীর পেট থেকে ৬৫৫ পিস ইয়াবা বের করা হয়। পরে ওই যাত্রীকে আসামি করে বিমানবন্দর থানায় মামলা করা হয়। বর্তমানে সে কারাগারে আছে।

শুধু রইছ মিয়া নয়, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক পরিবহনে নিত্যনতুন ও অভিনব কৌশল অবলম্বন করছে তার মতো বহু চোরাকারবারি। সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, সড়ক, রেল ও নৌপথে মাদক পাচারের ক্ষেত্রে ট্রানজিট হিসেবে  রাজধানীকে ব্যবহার করে বিভিন্ন চক্র। গত বছর মাদকবিরোধী অভিযানের পর সড়ক, রেল ও নৌপথে নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় কৌশল পাল্টাচ্ছে তারা। এখন তারা নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে আকাশপথ। সম্প্রতি আকাশপথে আসা বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও মাদকসহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়ে ৪০ মাদক চোরাকারবারি।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন কৌশলে বহন করা মাদকদ্রব্য শনাক্ত করতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দরের ভেতরে শিগগিরই এক্স-রে মেশিন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মেশিনটি স্থাপন করা হলে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক শনাক্তকরণ সহজ হবে।

ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার আবদুল মান্নান শিকদার সমকালকে বলেন, শিগগিরই বিমানবন্দরে মাদক শনাক্তে যাত্রীদের দেহ তল্লাশি করতে এক্স-রে মেশিন বসানো হচ্ছে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা সম্মতিও দিয়েছেন।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন শিমুল সমকালকে বলেন, গত ছয় মাসে এপিবিএন পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যৌথ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন যাত্রীর দেহ তল্লাশি করে সুকৌশলে লুকিয়ে রাখা প্রায় ৭০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে। যার বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৪০ জনকে। তারা বিমানবন্দরের বিভিন্ন ফ্লাইটের যাত্রী। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নারী মাদক কারবারিও রয়েছে। এসব ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় ২৭টির বেশি মামলা করা হয়েছে। পাশপাশি কাস্টমস কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন যাত্রীর দেহ তল্লাশি করে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের চালান জব্দ করেন। পুলিশ জানায়, এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো তদন্তাধীন রয়েছে।

বিমানবন্দরে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানবন্দরে পণ্য স্ক্যানার মেশিনে সহজেই ধরা পড়ে স্বর্ণ। কেউ স্বর্ণ নিয়ে আর সহজে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যেতে পারছেন না। কিন্তু মাদক ধরার ক্ষেত্রে যাত্রীদের দেহ তল্লাশি করার ক্ষেত্রে এক্স-রে মেশিন না থাকায় ওইসব স্ক্যানার মেশিন কাজে আসছে না। কারণ ইয়াবা বা অন্য মাদক ধাতব পদার্থ নয়। ইয়াবা ধরার ক্ষেত্রে এক্স-রে কার্যকরী বলেও জানান ওই কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিমানবন্দর এলাকায় ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ শাহরিয়ার পারভেজ, জাহাঙ্গীর, নেপাল পাল ও হাবিব নামে চার মাদক কারবারিকে আটক করে র‌্যাব। এ ব্যাপারে র‌্যাব-১-এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ রাকিবুজ্জামান জানান, বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে চালানটি সরবরাহের সময় ওই চারজনকেই আটক করা হয়। শাহরিয়ারকে তল্লাশি করে তার কোমরের বেল্ট থেকে সুকৌশলে লুকিয়ে রাখা ওই ইয়াবাগুলো জব্দ করা হয়। শাহরিয়ার অসংখ্যবার বিমানযাত্রী হয়ে ঢাকা-কক্সবাজার যাতায়াত করে। কখনও দিনে দু’বারও। প্রতিবার ২০-২৫ হাজার পিস ইয়াবা বহন করত।

সংশ্নিষ্ট একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের নজরদারি নেই। এ ছাড়া হাত বা ব্যাগেও নয়, মাদক কারবারিরা মাদক আনার ক্ষেত্রে দেহের পাকস্থলি ও গোপনাঙ্গ ব্যবহার করছে। যা এক্স-রে মেশিন ছাড়া ধরা সম্ভব নয়।

বিমানে করে ঢাকায় ইয়াবা পাঠাতেন ইয়াসিন!

ইয়াসিন আরাফাত। এক সময় ছিলেন হুন্ডি ব্যবসায়ী। কিন্তু তাতে সুবিধা করতে না পারায় শুরু করেন ইয়াবার ব্যবসা।

টেকনাফের হ্নীলা সীমান্তের এই বাসিন্দা টেকনাফ থেকে ঢাকায় ইয়াবা সরবরাহ করতেন। ইয়বা বহনে ব্যবহার করতেন গরীব শিক্ষার্থীদের। আর ঢাকায় ইয়াবা পাঠাতেন উড়োজাহাজে।

গত ৯ বছরে এভাবে ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছেন। টেকনাফের লোকজন তাকে চেনে ইয়াবা সম্রাট হিসেবে। ইয়াবার এই সম্রাটকে নিজের ‘সাম্রাজ্য’ টেকনাফ থেকেই গ্রেফতার করেছে ঢাকার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিভাগ।

রোববার তাকে গ্রেফতারের পর সোমবার তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

পিবিআই জানায়, গত ১৬ মে র‌্যাব সদস্যরা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে এক কোটি ৭২ লাখ টাকা মূল্যের ইয়াবাসহ মামুন নামে একজনকে গ্রেফতার করে। এরপর বেরিয়ে আসে ইয়াসিন আরাফাতের নাম। ওই ঘটনায় শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা হলে এর তদন্ত দায়িত্ব পায় পিবিআই। এরই ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তির সহায়তায় ইয়াসিন আরাফাতের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে টেকনাফ থেকে গ্রেফতার করা হয়।

পিবিআইয়ের (ঢাকা মেট্রো) পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, হ্নীলা গ্রামটি মিয়ানমারের নাফ নদীর তীরবর্তী হওয়ায় ইয়াসিন সহযোগীদের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান নিয়ে আসতেন। পরে এসব চালান কক্সবাজার থেকে সড়ক ও আকাশপথে ঢাকায় আনতেন। ইয়াবা বহনের জন্য তিনি গরিব ও নিরীহ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতেন। পাশাপাশি তার ইয়াবা বহনে বেকার যুবকদেরও ব্যবহার করা হতো।

পুলিশ সুপার বলেন, ইয়াবা বহনের বিনিময়ে ইয়াসিন শিক্ষার্থীদের মেসভাড়া ও লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। বেকার যুবকদের মাসিক বেতন দিতেন।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, ইয়াসিন বেশিরভাগ সময়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় উড়োজাহাজে আসা যা্ওয়া করতেন। নিরাপদ মনে করায় তার লোকজনও আকাশ পথে ঢাকায় ইয়াবা আনতো। এসব ইয়াবা পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে ছড়িয়ে দিতেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল।

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার বাড্ডার রুনা : এদিকে রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে রুনা নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। রোববার রাতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল এ অভিযান চালায়।

র‌্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার আবু রাসেল জানান, রুনার কাছ থেকে ৮৯০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। সে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী।

 

সুত্র-সমকাল

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.