আমি তো এখনই বিয়ে করতে চাই: পরীমনি

আমি তো এখনই বিয়ে করতে চাই: পরীমনি।

পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি স্বপ্নজাল দিয়ে ২০১৮ শুরু হয়েছিল পরীমনির। শেষ হয়েছে ওয়েব ফিল্ম প্রীতি দিয়ে। মধ্যের সময়টা অনেকটা বাঁকবদলের মতো কেটেছে তাঁর। বছরের শুরু থেকে শেষ—বদলে দিয়েছে নায়িকা পরীকে। এখন ২০১৯–এ দাঁড়িয়ে পরীর হাতে বাণিজ্যিক ছবির কাজ খুব একটা নেই। কিন্তু এরপরও তৃপ্ত তিনি। কেন? প্রচ্ছদকাহিনিতে পরীর কথায় থাকছে তাঁর আত্মতৃপ্তির ব্যাখ্যা।

ফেসবুকে পরীমনির পাতায় স্ক্রল করলেই তাঁকে খুব সহজে পাওয়া যায়। কিন্তু আদতে পরীমনির নাগাল পাওয়া সহজ নয়। কী নিয়ে ব্যস্ত তিনি? সিনেমা? নাকি প্রেম? তাঁর ভাবনায় কী এমন ভর করেছে যে পরীমনির নতুন কোনো ছবিরখবর আর পাওয়া যায় না। এসব জানতেই পরীমনির সঙ্গে আলাপ জমে আমাদের। কথায় কথায় উঠে আসে বিগত আর আগামী দিনের কথা।
স্বপ্নজাল–এ বদলে যাওয়া পরী
‘স্বপ্নজাল ছবি আমাকে “না” বলতে শিখিয়েছে।’—গত এপ্রিলে মুক্তি পাওয়া পরীমনি অভিনীত স্বপ্নজাল ছবিটি নিয়ে এভাবেই কথা শুরু হয়। এ ছবির মধ্য দিয়েই পরী ‘নায়িকা’ থেকে ‘অভিনেত্রী’ পরিচয়ে পরিচিত হতে শুরু করেন। গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত এই ছবি পরীর অভিনয়জীবনের এক স্মরণীয় বাঁক বলে মনে করেন খোদ এই অভিনেত্রী। পরী বলেন, ‘স্বপ্নজাল–এর আগে তো সম্পর্কের খাতিরে যেকোনো গল্পের ছবিতে কাজ করতে রাজি হয়ে যেতাম। স্বপ্নজাল–এর পর এখন আর যেকোনো পরিচালকের বা যেকোনো গল্পের ছবিতে কাজ করি না। এককথায় স্বপ্নজাল পরীমনিকে সিদ্ধান্ত নিতে শিখিয়েছে।’

নতুন বছরে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিলেন কি? প্রশ্ন করতেই গুছিয়ে বললেন তিনি, ‘হ্যাঁ, আমি চাইলে সারা বছরই বাণিজ্যিক ছবিতে কাজ করতে পারতাম। কিন্তু স্বপ্নজাল করার পর ফেসবুক, এসএমএস, মেইলে আমার দর্শক, শুভাকাঙ্ক্ষীরা মতামত দিয়েছেন, আমি যেন তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবিতে আর কাজ না করি। বছরে যদি একটা ছবিও করি, সেটা যেন আমাকে সারা বছর দর্শকের মনে বাঁচিয়ে রাখে। আমি সেভাবেই এগোচ্ছি।’
অধরা পরী
ঘুমকাতুরে এই অভিনেত্রীকে ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া যতটা সহজ, বাস্তবে তাঁকে খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। নিজের ব্যাপারে নাকি এই অপবাদ প্রায়ই শুনে থাকেন তিনি। কিন্তু একে নিছক ‘গুজব’ বলে চালিয়ে দেন পরী। তবে তাঁর যোগাযোগের বাইরে থাকার একটা ঠিকই যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেন আমাদের সামনে। বলেন, ‘পরীমনি তো তারকা। সে তো রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াবে না। তাঁকে খুজে পাওয়া কঠিনই হবে। আর তারকাদের সহজে পাওয়াও ঠিক হবে না। তাঁদেরকে পাওয়া এত সহজসাধ্য হলে দর্শকেরাই–বা কেন টিকিট কেটে প্রিয় তারকার ছবি প্রেক্ষাগৃহে দেখতে যাবেন?’

কঠিন সময়

পরীমনি যখন সিনেমায় নাম লেখান, তখন থেকেই খবরের শিরোনামে উঠে আসেন তিনি। কারণ, কোনো ছবি মুক্তির আগে ১৮টি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন এই নায়িকা। সেই ছবিগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন আছে ঠিকই, কিন্তু পরী ঠিকই উতরে গেছেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের একটা কঠিন সময়ের গল্প তাঁর কাছে জানতে চাই। পরী ফিরে যান বছর পাঁচেক আগে। বলেন, ‘প্রথম ছবি ভালোবাসা সীমাহীন-এর শুটিংয়ের দিন আমার নানি মারা যান। আমি মেকআপ নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াব, ওই সময় মৃত্যুর খবর আসে। ওই দিনগুলো খুব কঠিন ছিল আমার জন্য। মনে হচ্ছিল আমি আর সামনে এগোতে পারব না। হয়তো আর একটা দিনও চলতে পারব না, খেতে পারব না, ঘুমাতে পারব না। সময়টা অনেক কষ্টের ছিল।’

এখন, এই সময়ে…

পরীমনির সময়টা এখন বদলেছে। তাঁর বয়ানে স্থিরতা এসেছে ক্যারিয়ারে। গতানুগতিক বাণিজ্যিক ধারার ছবিতে আর না—এমন শপথ নিয়েই শুরু করেছেন বছর। সেই সঙ্গে আছে আরেকটা পরিকল্পনা। সেটা ব্যক্তিজীবন নিয়ে। চলচ্চিত্রপাড়ায় গুঞ্জন, তিনি নাকি বিনোদন সাংবাদিক তামিম হাসানকে বিয়ে করে ফেলেছেন। সেই গুঞ্জনের জবাব দিতে গিয়েই পরিকল্পনার কথাটা বলে ফেললেন পরী, ‘ইদানীং আমাদের দুই পরিবার বিয়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। একটা সুন্দর সময় ঠিক করে, আয়োজন করে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হবে। আমি আমার বংশের বড় মেয়ে আর তামিম তাঁর পরিবারের বড় ছেলে। তবে তামিম আর আমি তো এখনই বিয়ে করতে চাই। হা হা হা…’
পরীর চোখে চলচ্চিত্রের

সংকট–সম্ভাবনা

বিয়ে আর ব্যক্তিজীবনের কথা ছেড়ে এবার সিনেমাপাড়ায় ফেরা। এ সময়ে চলচ্চিত্রপাড়া নিয়ে পরী বলেন,‘চলচ্চিত্রে শিল্পীর চেয়ে মনে হয় এখন নেতাই বেশি হয়ে গেছে। এখানে ছবির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এসব নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা দেখি না। এখানে দলাদলিই বেশি হচ্ছে। মাঝেমধ্যে মনে হয় এফডিসি কি রাজনীতির মাঠ হয়ে গেল? এখানে শিল্পচর্চা হয় নাকি রাজনীতির চর্চা হয়, সেটা নিয়ে অনেক সময় দ্বিধায় পড়ে যাই। তাই আমাদের চলচ্চিত্রে সংকটের কথাই কী বলব আর সম্ভাবনার কথাই কী বলব!’

১০ বছর পেছনে…

কথার ফাঁকে হঠাৎ একটা প্রশ্ন, ‘১০ বছর পেছনে ফিরে গেলে পরীমনি কী এমন করতেন, যা তখন করার সুযোগ হয়নি?’ জবাবটা যেন ঠোঁটের কাছেই তৈরি ছিল, ‘তাহলে নায়িকা পরীমনিকে পাওয়া যেত না। পরী পুলিশ কর্মকর্তা হতে চেয়েছিল। ১০ বছরে পেছনে ফিরে গেলে প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে যেত।’ বলেই হেসে ফেলেন পরী। সেই হাসির রেশ ধরেই শেষ হয় আমাদের খানিকক্ষণের আলাপ।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.